Archiveপোর্টজিন

আমার চোখে সুধাংশু দে — শুভঙ্কর দাস

 

আমার চোখে সুধাংশু দে — শুভঙ্কর দাস

Nblive পোর্টজিনঃ তখন ক্লাস ৯ এ পরি বাবার হাত ধরে জ্ঞাত অবস্থায় প্রথম বার ছন্দমে পা রাখা, নাটক “আবার যদি”। ছন্দমের মঞ্চসফল নাটক গুলির মধ্যে অন্যতম, নির্দেশনায় সুধাংশু দে ও আশোক বন্ধ্যোপাধ্যায়। যে নাটক আমায় প্রথমবার মন কেরেছিল সেই নাটকই ছিল “আবার যদি”। নাটকের প্রতি ইচ্ছে বাড়লেও সামনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এই ভেবে আবার পিছিয়ে আসা। তবে হ্যাঁ তার পর থেমে থাকিনি, কেননা একদিন বাবার ফোনে ফোন এল ওপার থেকে একজন বেশ ভারী কন্ঠে শুধু বললেন “নাটক করবি?” ব্যাস সুধা জেঠুর একবার ডাকেই সারা দিয়ে ছুটে যাই ছন্দমে।

 

সালটা সম্ভবত ২০০৮ নাটক “ফুলমোতিয়া”। প্রায় সবাই বড় মাপের অভিনেতা সেখানে নিজেকে জায়গা করে নেওয়া খুব চাপের। তবে হ্যাঁ বড় শিল্পিদের মাঝে নিজেকে দেখতে পেয়ে আনন্দের সীমা কম ছিলনা। শেষমেষ জায়গা পেলাম একটা ক্ষুদে চরিত্রে,তাই মনটা ভীষন খারাপ ছিল সেদিন। সুধা জেঠুর একটা কথা মনে বড়ই গেথেছিল সেদিন “কোন চরিত্রই ছোট হয়নারে পাগলা ধৈয্য রাখ”। ঠিক তাই হল আমার সাথে, পরবর্তীতে ছন্দমের যেউ প্রোডাকশনই হোকনা কেন আমি ছিলাম। তবে “পদ্য গদ্য প্রবন্ধ” নাটকের মাধ্যমে একজন নাট্যকর্মী হিসেবে আমায় লাইম লাইটে নিয়ে আসার কাজটা উনিই করেন। অভিনয় কি জিনিষ তা আমায় শেখানোর দায়ভারটা যেন উনিই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে “মেবার পতন” নাটকেও তার বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় রাখেন তিনি। তবে হয়ত জীবনের শেষ লগ্নে এসে নাটক “কাল প্রধানমন্ত্রী আসছে” তাঁর জীবনের সেরা নাটক গুলির মধ্যে অন্যতম।

যে নাটকের মাধ্যমে সাধারন চরিত্র গুলিকে উনি বিশেষ চরিত্রের রূপ দিয়েছিলেন। কিভাবে চরিত্র তৈরি করতে হয় তা শিখেছি তাঁর কাছ থেকেই। তবে হ্যাঁ শুধু পরিচালক কিংবা অভিনেতা হিসেবেই তিনি পরিচিত নন, রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে একজন ভালো কবি তথা একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবেও তাঁর পরিচিতি কম ছিল না। তবে এত ব্যস্ততার মাঝেও ঠিক সন্ধ্যা ৭ বাজতে না বাজতেই ছন্দমে আসতে ভুলতেন না। রিহারসালের দিনগুলো কথা মনে পরে ৭ টা বেজে ৫ মিনিট দেরী হলে কৈফিয়ত দিতে হত তাঁকে। প্রথমদিকে হয়ত না বুঝলেও আজ বুঝি কেননা সেই বলার জন্যেই আজ হয়ত “ছন্দম” বাকীদের থেকে আলাদা। জীবনের শেষ সময়ও বলতেন ‘বাবাই ছন্দমটাকে বাচিঁয়ে রাখিস’। ছন্দম যেন তাঁর কাছে অক্সিজেন গ্যাসের মত। এইত সেদিন ফোন করে বললেন আবার নতুন নাটক ধরব রেডি থাকিস। রেডিও ছিলাম কিন্তু হয়ত তিনি থাকতে পারলেন না কেননা তার পরেই শরীরটা বড্ড বেশী খারাপ হয়ে যায়। এমনকি বাংলাদেশে নাটক করতে যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই গেলেও উনি শেষ মেস যেতে পারলেন না। তার পর থেকেই একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গত ৭ দিন আগে শেষ বারের জন্যে দেখা হয়েছিল তাঁর সাথে। তার পর আর তেমন ভাবে কথা হয় নি। গত শুক্রবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভরতি করা হলে রেফার করা হয় শিলিগুড়ি সেখানেই একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উনি। তাঁর মৃত্যুতে অভিনয় জগতে এক বিরাট শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছে যা পূরন করা এক প্রকার অসম্ভব। উনি যেখানেই থাকুক উনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

 

লিখেছেন…

শুভঙ্কর দাস, নাট্যকর্মী, ছন্দম

 

Related News

Back to top button