Archiveবেঙ্গল লাইভ Special

কুয়াশায় ঢাকা বোবা আলো আর দার্জিলিংঃ পঞ্চম কিস্তি

Nblive বিশেষ প্রতিবেদনঃ

অধিকতর উন্নয়নঃ

দার্জিলিং সম্পূর্ণরুপে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে চলে আসার পর ব্রিটিশরা নিজেদের মত করে দার্জিলিংকে সাজাতে শুরু করলেন। তার প্রথম পদক্ষেপ ১৮৫০ তে দার্জিলিং পৌরসভার স্থাপন। চা বাগান ব্যবসা ততদিনে ঊর্ধমুখী,সীমান্ত নিয়েও কোন বিবাদ নেই। এই সময়ে নেপাল থেকে আসা প্রচুর সংখ্যক মানুষ যাদের বিভিন্ন নির্মিয়মাণ এলাকা, চা বাগান ও বিভিন্ন কৃষি নির্ভর কাজে ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র দার্জিলিংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, এই সময়ে দার্জিলিংয়ে শিক্ষার পরিধি ( ইংরেজি কনভেন্ট) বিস্তার লাভ করছিল। স্কটিশ মিশনারীরা বিভিন্ন বিদ্যালয় নির্মাণ করছিল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছিল (মূলত ব্রিটিশ সাহেবদের জন্য)।

 

একের পর এক বিভিন্ন বিদ্যালয় গড়ে তুলে তারাঃ

লরেটো কনভেন্ট, ১৮৪৭
সেন্ট পল, ১৮৬৪
প্ল্যান্টার্স ক্লাব ১৮৬৮
লয়েড বোটানিক্যাল গার্ডেন, ১৮৭৮
সেন্ট. জোসেফ, ১৮৮৮
টাউনহল ( এখন যেটি পৌরসভা ভবন) ১৯২১।

এই সবের প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে দার্জিলিং-এর খোলনলচেই পালটে যেতে থাকে। ধীরেধীরে এটি সাহেবি আভিজাত্য লাভ করতে থাকে। ১৯২১ সালে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে ( DHR) চালু হবার ফলে পাহাড় ও সমতলের সাথে যোগাযোগের এক অন্য দিক খুলে যায়।

প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ

১৮৫০ অবধি দার্জিলিং শহরের নাগরিক পরিষেবার দায়িত্ব ছিল দার্জিলিং পৌরসভার ওপর। ১৮৫০-১৯১৬ পর্যন্ত দার্জিলিং পৌরসভাকে প্রথম তফশিলে রাখা হয় ( হালনা, হাজারীবাগ, মুজাফফরপুর ও অন্যান্যদের সাথে) এবং স্থানীয় মানুষদের হাতেই ক্ষমতা ছিল কমিশনার নিয়োগ করার। কিন্তু পরে তা বদলে অর্থাৎ দার্জিলিংকে দ্বিতীয় তফশিলে ( বর্ধমান, হুগলী, নদীয়া, হাজারিবাগ সহ) আনা হয় ও স্থানীয় সরকারকেই পৌরপতি নিয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

১৮৬১ সালের আগে পর্যন্ত ও ১৮৭০-১৮৭৪ পর্যন্ত দার্জিলিং জেলা “Non Regulated Area” অর্থাৎ দেশের অন্য অঞ্চলের মত এখানে ব্রিটিশ শাসন বা আইন সরাসরি প্রযোজ্য নয়। এই “NRT” টার্মটি পরে বদলে “Scheduled District (তালিকাভুক্ত জেলা) করা হয় ১৮৭৪ তে। পরে আবার অর্থাৎ ১৯১৯ সালে বদল করে “Backward Tracts” এ ফেলা হয়। ১৯৩৫-১৯৪৭ পর্যন্ত রাজ্যটির পরিচিত ছিল “partially Excluded Area” ( আংশিক বহির্ভূত এলাকা) রুপে।

ট্যুরিষ্ট স্পট হিসেবে উন্নতকরণঃ

দার্জিলিংয়ের মূল বসবাসকারী ছিলেন অভিজাত ব্রিটিশরা, যারা প্রত্যেক গরমে নিয়ম করে এখানে ছুটি কাটাতে আসতেন। শুধু তাই নয়, কলকাতা থেকেও নিয়মিত পর্যটকরা আসতেন। কলকাতায় বসবাসকারী সেই সময়ের তথাকথিত এলিট ক্লাসের লোকেরা যেমন- সমৃদ্ধশালী রাজা-মহারাজা, জমিদার-ভূস্বামী, কোলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার সহ বিভিন্ন মানুষের পা পড়ছিল দার্জিলিংয়ে। ধীরে ধীরে “ছোট শহরটি” তে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকল এবং অচিরেই দার্জিলিং “পাহাড়ের রাণী” নামে পরিচিতি লাভ করল।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই সময় সারা ভারত জুড়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়লেও হিমালয়ের কোলের এই শৈল শহরে তার কোন উত্তাপ এসে পৌঁছায়নি। তার কারণ মূলত দুটো – ১. দূরবর্তী অবস্থান ২. স্বল্প জনসংখ্যা। যদিও একটি ব্যর্থ প্রয়াস ঘটেছিল ১৯৩০ সালে। যখন বিপ্লবীরা তৎকালীন বাংলার গভর্নর স্যর জন এন্ডারসনের ওপর হামলা চালায় কিন্তু সেটা সফল হয়নি।

চলবে…

Back to top button