Archiveপোর্টজিনরায়গঞ্জ

নানা আঙ্গিকে বর্ষবরণ : রায়গঞ্জের কয়েক টুকরো কোলাজ NBlive – এ

— সুকুমার বাড়ই

NBlive পোর্টজিনঃ  নববর্ষ পৃথিবীর প্রায় সকল জাতিসত্ত্বার ঐতিহ্যের একটি অনিবার্য অংশ। বাঙালীর ঐতিহ্যকে যে সকল উৎসব অনুষ্ঠান ধারণ করে আছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। দীর্ঘকাল আগে থেকে বাঙালীরা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করে আসছে। নববর্ষ বাঙালীর সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, প্রথা, আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পহেলা বৈশাখ বাঙালীর সর্ববৃহৎ সার্বজনীন উৎসব। বাঙালীরা এ দিনে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে মহানন্দে বরণ করে নেয়, সমৃদ্ধি ও সুখময় জীবন প্রাপ্তির প্রত্যাশায়। ওপার বাংলা এবং এপার বাংলার মানুষেরা এদিন মহাসমারোহে পালন করে থাকে। রায়গঞ্জেও বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পালিত হয় নব বর্ষবরণ।

রায়গঞ্জের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় বর্ষবরণ । সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। এই প্রভাতফেরীতে পা মেলান রায়গঞ্জের সমস্ত স্তরের মানুষ। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী কিছু নিদর্শন-পালকি, হাল, মোখাযুক্ত বলদ, পাখা, ঢাক ও নানা ধরনের জিনিস সহযোগে চলতে থাকে এ শোভাযাত্রা।বিবেকানন্দ মোড় থেকে মোহনবাটি হয়ে তা পরিক্রমা করে। এরপর আগামী প্রজন্মের শিশুদের নিয়ে চলে অংকন উৎসব। সারাদিনব্যাপী চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী দর্শকমণ্ডলীকে বছরের প্রথম দিনে মন ভরিয়ে দেয়।

রায়গঞ্জ স্টেশন ময়দানে সন্ধ্যায় আয়োজিত হয় কবি সম্মেলন। এখানকার নবীন ও প্রবীণ কবিরা তাঁদের কবিতা পাঠ করেন। ছিল সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও। রায়গঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাঙ্গালীয়ানায় তাঁদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী পার্থ সরকারের গান দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয়। আজকের এই অনুষ্ঠানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এবারের রায়গঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সময় যে সংস্থা বা যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে সমস্ত সংস্থাগুলোকে তাঁদের ঐ মানবিক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্বর্ধনা প্রদান। এছাড়া অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ছিল মিষ্টির দোকান। নানা রকমের বাহারী জিভে জল আসা বাঙ্গালীয়ানার পিঠেপুলি ছিল অন্যতম আকর্ষণ। ছিল বেশ কিছু হস্ত শিল্পের দোকান। বেশ একটি উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছিল। যা বাঙ্গালী সংস্কৃতির অঙ্গ।

আসলে অখন্ড বাঙালী জাতিসত্তার একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবে বিভেদ ও রাজনীতির দাপাদাপিকে রুখে দিয়ে আগামী প্রজন্মের কাছে নতুন বছরকে সম্প্রীতির বাঁধনে বাঁধার এক অনবদ্য প্রয়াস গ্রহণ করে এই মঞ্চ। সংস্থার সম্পাদক প্রিয়রঞ্জন পাল বলেন,সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা গত বৎসর থেকে এই বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। সাড়া পাচ্ছি বেশ ভালই। তিনি আরও বলেন যে ১লা বৈশাখে নববর্ষ উৎসবকে জাতিপুঞ্জ বিশ্ব- ঐতিহ্যের সম্মান দিয়েছে। এতে এই উৎসবের মাত্রা বেড়েছে অনেকটাই ।

রায়গঞ্জ ইন্সটিটিউট এ আমরা সবাই এর উদ্যোগে বর্ষ বরণ উপলক্ষে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রায়গঞ্জ প্রনবানন্দ যোগাশ্রম, মিলনপাড়া (মোহনবাটি) এর আয়োজনে কলেজ পাড়ায় সর্ণালী ভবনে বর্ষ বরণ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন সকাল থেকে গীতা পাঠ, গণেশমন্ত্র পাঠ, সমবেত প্রার্থনা, বার্ষিক মালাগাথা এবং নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয়। একটা ভাবগম্ভীর পরিবেশে, সুশৃংখ্যল ভাবে এই বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানের মূখ্য উদ্যোক্তা হলেন যোগগুরু সেবক সঞ্জিত। এখানে আবাল- বৃদ্ধ -বনিতা সকলেই যোগ দেন।

গীতাঞ্জলি সিনেমা হলের উল্টো দিকে অখিল ভূবন বিদার্থী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বর্ষ বরণ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা হলেন অরিন্দম প্রামাণিক।

এদিকে মোহন বাটি সংলগ্ন সবুজ সংঘ এদিন বর্ষ বরণ যথাযথ ভাবে সাংস্কৃতিক আবহে পালন করে। সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পী সমন্বয়ে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপহার দেয় তারা।

রায়গঞ্জ মুক্তির কান্ডারি একটু অন্য ধারায় পালন করল নববর্ষ। ইতিমধ্যে রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গে এই সংস্থা ব্যতিক্রমী একটি সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। কাণ্ডারি এবার ১২বছরের দুস্থ শিশুদের পোশাক দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এবং একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। প্রায় ৩০ জন আজ রক্ত দান করেন। সমস্ত শিশুদেরকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। সংস্থার কর্ণধার কৌশিক ভট্টাচার্য  বলেন সকলের সহযোগিতায় আমরা আজ ৫০০ দরিদ্র শিশুদের জামা কাপড় দিতে পেরেছি এবং রক্ত দান শিবির করে অন্যের জীবন দানের ব্যবস্থা করেছি। নববর্ষে এটাই আমাদের চরম এবং পরম পাওয়া।

Related News

Back to top button