হাসপাতালের সিসিইউতে ডায়াটারের মন ভোলানো কয়েকটা দিন

Nblive রায়গঞ্জঃ নাম তাঁর ডায়াটার হোলজার। জার্মানির ব্যাড ওয়াল্ডব্যাডের বাসিন্দা। জার্মানিতে কী কাজ করতেন সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু জানা না গেলেও তিনি যে খুব মজার মানুষ, সেই বিষয়ে জানতে বাকি নেই রায়গঞ্জ হাসপাতালের সিসিইউতে কর্মরত নার্স সহ অন্যান্য কর্মীদের। রোজ সকালে সিসিইউতে উপস্থিত সকলকে গুড মর্নিং জানান তিনি। নার্সদের সেবায় মুগ্ধ হয়ে “লাভ ইউ” মাঝে মধ্যেই বলে থাকেন। কখনও আবার নাতির বয়সী কর্মীদের আশীর্বাদও করেন। নাচ, গান করে মাতিয়ে রাখেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট। তাতে অবশ্য বিরক্ত বোধ করেন না কেউই। বরং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুয়ে ডায়াটার হোলজারের কান্ড দেখে বেশ মজাই পান অন্যান্য রোগীরা। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষেরা কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই যাচ্ছেন তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন।
প্রথম দিন শারীরিক ভাবে অনেকটাই দুর্বল ছিলেন তিনি। তাই পুরুষ বিভাগ থেকে তাঁকে স্থানান্তর করে সিসিইউতে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। ডায়াটার হোলজারের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে কর্মী মুন্না বাসফোরের ওপর। কোন সময় কী খাবেন, কখন কী ওষুধ দেওয়ার আছে এই প্রকার সকল কাজই বিগত চারদিন থেকে করে চলেছেন মুন্না। বাটার টোষ্ট, কফি, নুডলস, মটন ষ্টু ইত্যাদি হরেক রকম খাওয়ারের আবদার মিটিয়ে চলেছেন মুন্না। সেই কাজের মাঝেই হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, একবার যদি নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম খুব ভালো লাগত তাহলে। কিন্তু কেন? হাসপাতালেতো রোজ অনেক রোগীই আসেন। সবাইকে কি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা মনে হয়? না, ডায়াটার বাবুকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জন্মেছে অন্য কারণে। আসলে বিগত চার দিন থেকে এই মানুষটার সাথে সময় কাটাচ্ছি। উনার বলা বেশিরভাগ কথাই বুঝতে না পারলেও আমাকে যখন বুকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করেন তখন আলাদা রকমের অনুভূতি হয়। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করেই বেশ গান গাইতে শুরু করছেন। নিজেও নাচ করছেন আমাদেরকেও সাথে সাথে নাচ করাচ্ছেন। বিগত চারদিনে মনেই হয়নি যে আমরা হাসপাতালে কাজ করছি। একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করেছেন বিদেশী এই ভদ্রলোক। একই কথা জানিয়েছেন সিসিইউ-এর কর্মী কৌশিক। “মাই ফ্রেইন্ড”, “আই লাভ মাই ইন্ডিয়া” এই দুটো কথা এই কয়দিনে যে কতবার শুনেছি তার ঠিক নেই। প্রায় সবসময়ই মুখে হাসি লেগেই রয়েছে তাঁর। অভিভাবকের মতন বাকি রোগীদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন, আমাদের সাথে গল্প করছেন, গান করছেন, নাচ করছেন। জার্মান ভাষা আমরা জানিনা ঠিকই কিন্তু তিনি যে আমাদের ছেলের মতন ভালোবাসছেন সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছি আমরা।
এই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য কৌশিক চৌধুরীও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে, ঠিক মতন খাচ্ছেন কী না। ইত্যাদি খোঁজ নেওয়ার জন্য একাধিকবার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। যতবারই দেখা হচ্ছে ততবারই মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করছেন। বেশ ভালো লাগছে। এই চারদিনে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। আশা করছি খুব শীঘ্রই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হবে। উনি চলে যাবেন ঠিকই তবে স্মৃতিতে থেকে যাবে ডায়াটার হোলজার।