Archiveপোর্টজিনরায়গঞ্জ

মার্ক্স আমার ভাই, রায়গঞ্জে বললেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক

Nblive পোর্টজিন, শান্তনু মিশ্রঃ ইংরাজি বিভাগ, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে শুক্রবার রায়গঞ্জ বিধানমঞ্চে এক আলোচনা সভায় উপস্থিত হলেন বিদ্যায়তনিক দুনিয়ার বিখ্যাত নক্ষত্র গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক সহ গবেষকরা। স্পিভাকের কাজ-কর্ম, গবেষণার ক্ষেত্র, তাঁর ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোকপাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের অধ্যাপিকা সংযুক্তা চ্যাটার্জী।

আলোচনাচক্রের প্রক্রিয়াকে দুইভাগে পরিচালনা করেন আয়োজকরা। প্রথম পর্বে স্পিভাক তাঁর বিখ্যাত পর্যবেক্ষণ “Can the subaltern speak?” প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 

কী বললেন স্পিভাক, আসুন, জেনে নিইঃ 

সাবঅল্টার্ণ কারা: স্পিভাক

গ্রামসি মতে, ‘সরলীকরণ করা যাবে না, এমন প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠী’। প্রলেতারিয়েতকে পুঁজির যুক্তি দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে কিন্তু এদের যাবে না। সুতরাং হ্যাঁ, ওরা একটি গোষ্ঠী। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ওরা ভাষা ব্যবহার করতে পারে না। অবশ্যই ভাষা ব্যবহার করে কিন্তু কী বলছে শোনার মতো সেই অবকাঠামো আমাদের নেই।

প্রেক্ষাপট: Can the Subaltern speak?

প্রথম পর্বে Can the subaltern speak?-এর প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গিয়ে স্পিভাক বলেন, তাঁর মায়ের মাসি ভুবনেশ্বরী ভাদুড়ী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীদের একটা গ্রুপের অংশ ছিলেন। ১৯২৬ সালে তাঁর বয়স যখন ১৭, তাঁকে গুপ্তহত্যার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে হত্যা করতে না পারায় তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। এই ভীষণ সময়ে যখন মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তখন তিনি ঋতুস্রাবের অপেক্ষা করেছেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন কেউ যেন না ভাবে যে, অবৈধ সন্তানধারণের কারণেই কাজটা করেছেন। নিজের শরীর দিয়ে কথা বলার জন্য সব কষ্ট সহ্য করেছেন তিনি। স্পিভাক আরও বলেন, “অথচ দুই প্রজন্ম পরে আমার এক বোন, আমার মতোই শিক্ষাগত পটভূমি তার। বলেছিল, ‘অবৈধ সন্তান ধারণের কারণে আত্মহত্যা করেছে এমন একজনকে নিয়ে কেন কাজ করছ?’ তখন যথেষ্ট রাগে আমি বলেছি, ‘সাবঅল্টার্নরা কথা বলতে পারে না!’ এমনকি নিজের সারা শরীর দিয়ে কথা বলেও এমন ভয়ঙ্কর সময়ে চারদিন অপেক্ষা করেও কথা বলার কাজটা শেষ হতে পারেনি। সুতরাং তিনি কথা বলতে পারেননি। তার মানে এই নয় যে, ওরা কথা বলতে পারে না। কিন্তু কেউই তাকে শুনতে পারেনি। এই কারণেই কথাটা আমি যেভাবে বলেছি, সেটা রাগের কারণে।”

Politics of Representation প্রসঙ্গে স্পিভাকঃ 

অর্থাৎ, উপস্থাপনের রাজনীতি। সাবঅল্টার্ণদের বাস্তব চিত্র এবং তাদের যেভাবে উপস্থাপিত করা হয় এই দুইয়ের মাঝের ফারাক নিয়ে কথা বলেন স্পিভাক। এই দুইয়ের মাঝের রাজনীতি নিয়ে তিনি সচেতন হওয়ার কথা বলেন তিনি।

আমার চোখে জাতীয় মুক্তিই বিপ্লব নয়: স্পিভাক

কথার রেশ ধরেই চলে আসে রূপ কানোয়ার প্রসঙ্গ। স্পিভাক বলেন, রামমোহন, বেন্টিঙ্ক এঁরা সতীদাহ উচ্ছেদ করেছিলেন ঠিকই, তবে তার বীজটা নয়। এবং তা নিয়ে সেই অর্থে কোনও কাজ হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে চলে আসেন রূপ কানোয়ার। ১৯৮৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের শিকার জেলার দেওরালা গ্রামে স্বামীর সঙ্গে সহমরণে গিয়েছিলেন বছর আঠারোর রূপ কানোয়ার। দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। স্পিভাক বলেন, সহমরণের সময় কিন্তু রূপের মায়ের চোখ ছিল যথেষ্ট উজ্জ্বল। নারীর মধ্যেও যে ভীষণরকম পুরুষ বাস করে, তা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। বলেন, “নিপীড়িত মানেই সে ভাল, একথা বলবো না। হ্যাঁ, এটুকু বলতে পারি, যিনি নিপীড়ন করছেন, তিনি খারাপ”

তাত্ত্বিক সৃষ্টির দিক থেকে ফুকো ও ডেল্যুজ প্রসঙ্গে স্পিভাক:

আমি তাত্ত্বিক সৃষ্টির দিক থেকে ফুকো ও ডেল্যুজের বেলায় নেতিবাচক ছিলাম না। আসলে দুজনকেই দারুণ সমীহ করি। তবে আমি লক্ষ করেছি, পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তার সময় তারা যেন তাত্ত্বিক অবস্থান ব্যবহার করছেন না। আর দশ জনের মতো করেই কথা বলছেন। খেটে খাওয়া শ্রেণীকে রোমান্টিসাইজ করছেন। কিন্তু লেখার সময় তারা এভাবে লেখেননি।

আপনি কি মার্ক্সিস্ট?

শ্রোতাদের বিবিধ জিজ্ঞাসার মধ্যে একটি ছিল, “আপনি কি মার্ক্সিস্ট?” উত্তরে স্পিভাক বলেন, “মার্ক্স আমার ভাই। আমি ইস্ট ফিস্ট নই।” এর আগেও সাংহাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল বাইয়েনিয়াল অ্যাসোসিয়েশনে প্রবন্ধ পাঠের সময়ও একই কথাই বলেন স্পিভাক।

Related News

Back to top button