নিজেকে খুনের জন্য কন্ট্র্যাক্ট কিলার ! আফসোস দেখার আগে পড়ুন এই রিভিউ
অনুরাগ কাশ্যপের বোন অনুভূতি কাশ্যপ বানিয়েছেন কমেডি সিরিজ আফসোস। কাহিনী বাংলা উপন্যাস “গল্পের গরু চাঁদে” অবলম্বনে। অ্যামাজন প্রাইমে দেখুন বাংলা উপন্যাস অবলম্বনে আফসোস, তার আগে পড়ে নিন এই রিভিউ। লিখেছেন সৌম্যদীপ গুহ।
Bengal Live বিনোদনঃ চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকটি সিরিজ রিলিজ হয়েছে। সবই আপনার ওয়াচ লিস্টে স্থান পাবে নিশ্চই। তবে যা আপনি অবহেলায় দেখেননি তা হল আফসোস। বাংলা উপন্যাস “গল্পের গরু চাঁদে” অবলম্বনে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার ওয়েব সিরিজ “আফসোস”। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তে রিলিজ করেছে এর প্রথম সিজিন। আফসোস না করতে হলে চটপট অ্যামাজন প্রাইমে গিয়ে দেখতে হবে। বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারে লুকিয়ে থাকা মণি-মুক্তোর মধ্যে “গল্পের গরু চাঁদে” এক অনন্য রচনা। অনুরাগ কাশ্যপ-এর বোন অনুভূতি কাশ্যপ-এর এটি প্রথম পরিচালনা।
ইতিপূর্বে সে দাদার প্রায় সমস্ত ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছে। প্রধান চরিত্রে গুলশান দেবাইয়া, অঞ্জলি পাটিল ও হিবা শাহ। আফসোস মূলত ডার্ক কমেডি ঘরানার সিরিজ। এই ডার্ক কমেডি ঘরানার সাথে দর্শক ততটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি এখনও। তাই এই সিরিজ দর্শকের ভাল লাগার তালিকায় জায়গা করে উঠতে পারেনি। সেই কারনে আফসোস একটি আন্ডাররেটেড সিরিজ হিসেবে খানিকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আন্ডাররেটেড হওয়ার পেছনে অবশ্য কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করে। পাব্লিসিটি, ব্যানার, মিডিয়া হাইভ, কাস্টিং এবং সর্বপরি গল্প হজম করার মতো ডায়জেস্টিভ সিস্টেম। তাই যারা দেখেছেন এবং অনেকেরই মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া বলটিকে সিক্সার না ভেবে আউট ধরে নিয়েছেন।
সিনেমার কথা বলতে গিয়ে গল্প বলে ফেলাটা এক ধরণের অপরাধ মনে হয়। কার্যত তা জেনেই সামান্য অপরাধে সামিল হচ্ছি। যারা জেনেছেন সিরিজের নামটি অথচ দেখবেন কিনা সেই সিদ্ধান্তে নিজেকে দোদুল্যমান অবস্থায় রেখেছেন তাদের জন্য এবং তাদের জন্যেও যারা আন্ডাররেটেড ভেবে পাশ কাটিয়ে গেছেন। দুটো লাইনে গল্পটি বলছি, এক ব্যক্তি নিজের জীবনের ওপর হতাশ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বারংবার। প্রতিবার সে বেঁচে যায় কিম্বা কেউ বাঁচিয়ে দেয়। তার নিরলস প্রচেষ্টা সত্বেও সফলতা অর্জন না করায় সে কন্ট্রাক্ট কিলার ভাড়া করে নিজেকে মারবার জন্য নিজেরই টাকায়। তাকে মেরেও দেয় সেই কিলার অথচ সে বেঁচে যায় কালক্রমে। এবার সে বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পায় এবং মরবার ইচ্ছা ত্যাগ করে। কিন্তু কিলার, যে এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছে সে তার কাজ করতে বদ্ধপরিকর। মানুষ মারাতে তার একটা রেপুটেশন আছে! আর সেটি সে খোয়াতে নারাজ। গল্পটি শুনতে বা পড়তে যতটা মজার লাগে তার চেয়ে গল্পটি নিজেই নিজের কাছে অতীব বিস্ময়কর!
ডার্ক কমেডি ঘরানার সিরিজ কিম্বা সিনেমা দেখার অদ্ভুত এক মজা আছে। ধরুন, কেউ কাউকে খুব মারছে, সিরিয়াসলি মারছে কিন্তু তা দেখে আপনার হাসি পাচ্ছে। কেন হাসি পাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে আপনি বলতে পারবেন না। ব্যাখ্যাও করতে পারবেন না ঠিকঠাক। আফসোস দেখার পূর্বে সম্প্রতি দেখা সমস্ত সিনেমা, সিরিজের হ্যাংওভার থাকলে তা ঝেড়ে ফেলে বসুন। এই সিরিজে ড্রামা, সাসপেন্স, অ্যাকশন, ক্রাইম, থ্রিল সব পাবেন। কিন্তু র্যাপারটা হাসির। তাই বলে হো হো বা হি হি করে হাসবেন তারও উপায় নেই। যদিও বা হাসি এসেও যায় ঠোঁটের ফাঁকে পরক্ষণেই তা মিলিয়ে বিষন্নতায় ভরে উঠবে। আফসোস দেখতে দেখতে মনে পড়বে টম এন্ড জেরি-র কথা।
পুরো সিরিজ জুড়ে শুধু গুলশান-এর গুলশান। তার ম্যানারিজমের সাথে যথার্থ এই চরিত্র নকুল। গুলশান দেবাইয়ার কমিক সেন্সটাই ভিন্ন রকমের। বরাবর তাঁর কমিক টাইমিং লা-জবাব। ইতিপূর্বে তাঁর হান্টার, মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা ছবিগুলোতে অদ্ভুত রকমের কমিক বাতাবরণ তৈরি করেছে। কন্ট্র্যাক্ট কিলারের চরিত্রে হিবা শাহ অসাধারণ। কাহিনী সিনেমার শাশ্বত চ্যাটার্জি-র পরে এমন ভিন্ন ধরনের কন্ট্রাক্ট কিলার-এর চরিত্র মনে রাখার মতো।
এই সিরিজের শুরু ও শেষ দৃশ্য একই লোকেশন তথা গল্পের শুরু ও শেষ।গল্পের নায়ক নকুল-এর অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয় না। তার জীবন নানান মোড় ঘুরিয়ে তাকে তার নিয়তি একই জায়গায় দাঁড় করায়। এই বিষয়টি বেশ চমৎকার। সাথে দিয়ে যায় নিদারুণ ম্যাসেজ। টানটান এই সিরিজে হয়েছে একটি মাত্র ক্যামেরার ব্যবহার। দর্শককে গল্পে আটকে রাখে অন্য রকমের সিনেমাটোগ্রাফি। প্রাপ্তি কন্ট্রাক্ট কিলার উপাধ্যায় ওরফে হিবা শাহ!