বিনোদন

বুলবুল নয় তার আগে কড়ক দেখুন

সমাজের উঁচু তলার শিক্ষিত ভাবাপন্ন মানুষকে বিদ্রুপ করে গোটা সিনেমা হাসির মোড়কে। লিখেছেন সৌম্যদ্বীপ গুহ।

Bengal Live বিনোদনঃ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌঁড়ে শামিল আরেক নতুন নাম সোনি লিভ। অন্যান্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি এখন এখন সোনি লিভ নিয়ে আসছে ভারতীয় কন্টেন্ট। যদিও সোনি লিভ বহুদিনের পুরনো নাম। কিন্তু তারা এতদিন অন্যান্য কন্টেন্ট পাবলিশ করত। এখন সিনেমা ও সিরিজকে অন্তর্ভুক্ত করল নতুন রূপে। যার শুরু রজত কপুর-এর “কড়ক” দিয়ে। ভারতীয় সিনেমায় কর্মাশিয়াল, প্যারালাল-এর পাশাপাশি “ক্রিয়েটিভ থটস” নিয়ে কাজ চলছে বহুদিন যাবৎ।

কিন্তু তার সংখ্যা নেহাৎ কম। কমের কারন অবশ্যই দর্শক। দর্শক কম হওয়ার দরুন প্রযোজকেরা স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু উৎসাহ হারায় না পরিচালক ও সেইসব অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। তাই তারা সুযোগ পেলেই এসে জড়ো হয় এক ছাতার তলায়। কড়ক-এর মতো। রজত কপুর, রনবীর শোরে, চন্দ্রচূড় রয়, মানসি মুলতানী, শ্রুতি শেঠ, সাইরাস শেখর, কাল্কি কোচিন, নুপূর আস্থানা ও সাগর দেশমুখ-এর মতো অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের একসাথে দেখার সুযোগ ঘটে কড়ক-এ।

ক্রিয়েটিভ থটস নির্ভরিত সিনেমার দর্শক কম হওয়া সত্বেও কিছু পরিচালক বানিয়েই যায় এবং অপেক্ষা করে পরবর্তীর। তাদের কাছে শিল্প ও ব্যবসা বোধহয় সহবস্থান করে না। তারা ভাল সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়তে বেশি উৎসাহী। ভারতীয় দর্শকের কাছে এই ধরনের সিনেমার গ্রহনযোগ্যতা কম জেনেও যারা এই দুঃসাহস দেখিয়ে চলে তাদের জন্য স্যালুট। এটা এক রকমের লড়াই। আর এই লড়াই চালিয়ে যায় ইন্ডাস্ট্রির অচর্চিত পরিচালকেরা।

কড়ক একটি ডার্ক ঘরানার সিনেমা। এবং রজত কপুরের সপ্তম পরিচালনা। তার পরিচালিত প্রতিটি সিনেমাই ক্রিয়েটিভ থটস নির্ভর। তাই তার গল্প ও গল্প বলা ভিন্ন রকমের হবে এটাই স্বাভাবিক। পুরনো বোতলের ওয়াইন নতুন গ্লাসে পরিবেশন তার একদমই না পসন্দ। উল্লেখযোগ্য আঁখো দেখি, মিথ্যা, রঘু রোমিও, ফাটসো ও মিক্সড ডবলস। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন কড়ক। যার ট্যাগ লাইন A house party with a dead body। যা রোমাঞ্চিত করে দেখার আগেই এবং দেখতে দেখতে সজোরে চপেটাঘাত করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের গালে।

প্রায় দেড় ঘন্টার এই সিনেমা সবটাই ওয়ান রুম ড্রামা। গল্পের দৈর্ঘ্য একটি রাতের। দিপাবলির রাতে সুনীল ওরফে রনবীর শোরে’র বাড়িতে একত্রিত হয় নিমন্ত্রিত বন্ধু ও অ-আমন্ত্রিত অতিথি। গল্প গড়ার সাথে সাথেই দর্শক হয়ে ওঠে সুনীলের বাড়ির অনাহুত অতিথির মতো। রজত কপুরের গল্প বলার মুন্সিয়ানা এখানেই। দেড় ঘন্টায় এত চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য থেকে শুরু করে তাদের সোস্যাল স্ট্যাটাস, মানুষের প্রতি তাদের দর্শন, বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্বার্থপরতা বার করে আনে। তার সাথে বেড়িয়ে আসে রঘুর লাশ। ঠিক সেই মুহুর্তেই বদলে যায় গল্পের রঙ। সেই রাতে সেখানে উপস্থিত থাকে রঘুর স্ত্রী যে আবার সুনীলের এক্সট্রা ম্যারেটাল পার্টনার।

সমাজের উঁচু তলার শিক্ষিত ভাবাপন্ন মানুষকে বিদ্রুপ করে গোটা সিনেমা হাসির মোড়কে। এই হাসি কাতুকুতু দিয়ে নয়। স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাঙ্গাত্মক হাসি। যার খোড়াক জোগায় অবশ্যই মানুষের চরিত্র। তাদের চরিত্র অন্য মানুষের হাতে তুলে দেয় বন্দুক। এবং সেই বন্দুক তাক করে উঁচু তলার মানুষের দিকে। যাদের দিয়ে নির্লজ্জ স্বীকারোক্তি করায়। এছাড়াও নির্লজ্জতার অদ্ভুত যুক্তি দেয় গল্পের সংলাপ এবং স্বভাব।

কড়ক-এর পরিচালকের পাশাপাশি তার সিনেমাটোগ্রাফার রফেহ মহম্মদ দুর্দান্ত। তেমনিই সম্পাদনা। এই তিনের মিশেলে অনবদ্য কড়ক। সিনেমার শুরুর দিকের কালার অদ্ভুত রকমের সুন্দর। যা গল্পের স্বাদ বয়ানে সহায়তা করে। এমন ছবি বারবার হোক। থিয়েটারে স্থান না পেলেও অন্তত ওটিটি-তে হোক। দর্শক তৈরির এই লড়াইয়ে সবাই সামিল হোক। তবেই বদলাবে ভারতীয় সিনেমার মান। ভারতীয় শিল্পের মান।

Related News

Back to top button