বলিউডে আবারও মৃত্যুর ছায়া,আত্মঘাতী সুশান্ত সিংহ রাজপুত
বলিউডে আবারও মৃত্যুর ছায়া। নতুন বছরের শুরুর থেকেই এক এক করে অভিনেতা -পরিচালক-সুরকারের জীবনাবসান হয়েছে। সেই তালিকায় এবারে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।
” পনছি চলা উস দেশকোঁ
হ্যায় যাহাঁ রাত মেঁ সুবহা খুলি”…
( সোনচিড়িয়া, ২০১৯)।
Bengal Live প্রতীক সান্যালঃ বলিউডে আবারও মৃত্যুর ছায়া। নতুন বছরের শুরুর থেকেই এক এক করে অভিনেতা -পরিচালক-সুরকারের জীবনাবসান হয়েছে। সেই তালিকায় এবারে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই প্রয়াত হলেন রূপোলি পর্দার এই খ্যাতনামা অভিনেতা। সূত্রের খবর কিছুদিন ধরে তিনি ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। আজ নিজের বাড়িতেই তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় আজ পাওয়া যায়। তাঁর এই অকাল প্রয়াণে মুহূর্তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশ জুড়ে।
পাটনায় জন্মানো সুশান্তের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী।পরিবারে তার চার দিদি আছে। তার এক দিদি মিতু সিং একজন রাজ্যস্তরের ক্রিকেটার। রাজপুত পাটনার সেন্ট কারেন্স হাই স্কুল ও নতুন দিল্লির কুলাচি হংসরাজ মডেল স্কুলে পড়াশোনা করার পর দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিন বছর পড়াশোনার পরে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন তুখোড়। ফিজিক্সে তিনি দেশের মধ্যে অলিম্পিয়াড ছিলেন। এছাড়াও একটি সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তিনি দেশের মধ্যে প্রথম হন ।
মুম্বাই আসার পর তিনি শামাক দাভারের নাচের দলে যোগ দেন। এবং অচিরেই তিনি ২০০৬ কমনওয়েলথ গেমস ও ৫১তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস-এ অংশগ্রহণকারী হিসেবে পারফর্ম করেন । সাথে সাথে থিয়েটারে অভিনযও় চালিয়ে যান। কিছুদিন নাদিরা বব্বরের দল “একজুটে”র সদস্য থাকেন।
২০০৮ সালে টিভি তে ব্রেক হিসেবে রাজপুত বালাজি টেলিফিল্মস প্রযোজিত কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল ধারাবাহিকে প্রিত জুনেজার চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে তিনি পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে মানব দেশমুখের চরিত্রে অভিনয়ের কল্যাণে ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা পান। 2010 সালে তিনি ঝলক দিখলা যা ৪-এ অংশগ্রহণ করে “মোস্ট কনসিস্টেন্ট পারফর্মার” পুরস্কার পান। এরপর তিনি সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে পবিত্র রিস্তা ছেড়ে দেন।
এরপর ২০১৩ সালে প্রথম ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে । মুক্তি পায় অভিষেক কাপুর পরিচালিত কই পো চে! রাজপুতের প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবিটি সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়। এরপর রাজপুত মনীষ শর্মা পরিচালিত শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স ছবিতে পরিণীতি চোপড়া ও বাণী কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবিটিও বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। রাজকুমার হিরানি পরিচালিত পিকে চলচ্চিত্রে রাজপুত একটি ছোটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।
স্বল্প পরিসরেও তার উপস্থিতি প্রশংসনীয় হয়ে ওঠে। এরপর দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী! ছবিতে রাজপুত বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত গোয়েন্দা রচিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিতে দিবাকর নতুনভাবে ব্যোমকেশ কে সাজিয়ে তোলেন পর্দায় । যদিও বাঙালি ভক্তকূল এই ‘বিয়মকেশ’ কে নিতে পারেনি। এরপর একের পর এক অভিনয় করেছেন শুধ দেশি রোম্যান্স, রাবতা, সোনচিরিয়া, ছিঁছোঁরে- মতো একাধিক ব্লক বাস্টার সিনেমায়। সেলিব্রেটি হিসাবে তাঁর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই কী কারণে হঠাৎ তিনি আত্মহত্যা করলেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
কিছুদিন আগেই একটি বহুতল ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন সুশান্ত সিং-এর ব্যক্তিগত ম্যানেজার দিশা সাইলান। এর পরেই অভিনেতা নিজেও আত্মহত্যা করলেন। এই দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। অবশ্য আত্মহত্যার কারণ যাই হোক, ভারতীয় চলচ্চিত্র যে একজন প্রতিশ্রুতিবান অভিনেতাকে হারাল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।