বিনোদন

১০ বছর পর অভিনয়ে সুস্মিতা সেন, কেমন হল ফিরে আসা?

পুরুষ প্রভাবিত ছবির জগতে নারী চরিত্রও সমান ভাবে পারদর্শীতার সাথে কিভাবে পাল্লা দেয় তার সাক্ষী বহন করে আরয়া ওরফে সুস্মিতা সেন। লিখেছেন সৌম্যদ্বীপ গুহ।

Bengal Live বিনোদন সৌম্যদ্বীপ গুহঃ এভাবেও ফিরে আসা যায়! হ্যাঁ, দীর্ঘ ১০ বছর পর আবার সুস্মিতা সেন টিভির পর্দায়। মাঝে বছর পাঁচেক আগে একটা বাংলা সিনেমায় স্বল্প দৃশ্যে। এবারে সরাসরি ডিজিটাল প্লাটফর্ম। এখন সে আরো বেশি পরিণত। আরো বেশি দীপ্তময়। নিজের চুয়াল্লিশ বছরকে কিভাবে শুধু সংখ্যাতেই আটকে রেখেছে সে নিজের চেষ্টায় তা প্রথম দৃশ্যেই বার্তা দেয়। পুরুষ প্রভাবিত ছবির জগতে নারী চরিত্রও সমান ভাবে পারদর্শীতার সাথে কিভাবে পাল্লা দেয় তার সাক্ষী বহন করে আরয়া ওরফে সুস্মিতা সেন। একটা গোটা সিরিজকে নিজ কাঁধে টেনে নিয়ে যেতে নারীরাও পিছিয়ে নেই।

১৯ জুন, ২০২০ শুক্রবার ডিজনি+হটস্টার-এর নিজস্ব টিভি সিরিজ আরয়া-র মুক্তি। যা জনপ্রিয় ডাচ শো “পেনোজা”-র ভারতীয় রিমেক। এর আগেও ডিজনি+হটস্টার এমন রিমেক বানিয়েছে। এতে দুটো সুবিধে আছে। কপি করার দোষে দুষ্ট হতে হয়না পাশাপাশি একটা স্ট্রং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যায়। সন্দীপ শ্রীবাস্তব-এর লেখনীতে রাম মাধবন-এর পরিচালনায় প্রাণ পেয়েছে আরয়া। পেনোজার গল্পকে নিপুণতার সাথে সম্পৃক্ত করেছে রাজস্থানের রাজপুত পরিবারের গল্পের সাথে।

আরয়া মূলত ” ফ্যামিলি ড্রামা” ঘরানার সিরিজ। তা থেকে গল্পের শাখা ছড়িয়ে পড়ে ক্রাইম জগতে। সুন্দর দেখতে ফুল একসময় আফিম হয়ে কেড়ে নেয় তরতাজা প্রাণ। আফিমের কালোবাজারিকে ভর করেই গড়ে ওঠে পারিবারিক ব্যবসা। আর সেই ব্যবসা কেড়ে নেয় প্রিয়জনের প্রাণ। গল্প বাঁক নেয় ঠিক সেখানেই। পরিবারের তাগিদেই নিজ সন্তানদের সুরক্ষা দিতে গিয়েই একজন গৃহবধু তথা একজন মা হয়ে ওঠে ক্রিমিনাল। গল্পের শাখা নানান ভাবে ছড়িয়ে গেলেও তা গুটিয়ে নেওয়া লাজবাব।

নয়খানা লম্বা এপিসোডের ভার কাঁধে নিয়ে একাই লড়ে চলে সুস্মিতা সেন। হাত মেলায় মায়া সারাও, সিকেন্দর খের, জয়ন্ত কৃপালিনী, নমিত দাস, বিকাশ কুমার, মণীশ চৌধুরি ও চন্দ্রচূড়। কিশোর পুত্র অমিত কুমারের গাওয়া “বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়” গানটিকেই পরিচালক এই সিরিজে আবহের মতো ব্যবহার করেছে। যা নস্টালজিয়ায় নিয়ে যেতে পারে কিছু দর্শককে। সিরিজে ব্যবহৃত পুরনো দিনের গানের ব্যবহারও একটা অদ্ভুত ছন্দ তৈরি করে।

পুরো সিরিজে পরিচালক প্রচুর ডিটেইল রেখেছে প্রতিটি চরিত্রকে ঘিরে। কিছু কিছু দৃশ্য যেমন রোমাঞ্চ জাগায় তেমন ভাবায় বারবার। বিশেষ করে আরয়ার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে দাহ করে ফিরে এসে গোটা পরিবারের হাইবারনেশন-এ যাওয়া। যদিও তা পেনোজা থেকেই নেওয়া। মাফিয়ার চরিত্রে মণীশ চৌধুরি দারুণ। তার প্রধান সহযোগী সম্পত-এর চরিত্রে বিশ্বজিত প্রধান অনবদ্য। এসিপি খান ওরফে বিকাশ কুমার পুরো ব্যালেন্সড। বলিউডের অন্ধ গলিতে প্রায় হারিয়ে যাওয়া সহ অভিনেতাদের খুঁজে এনে পরিচালক আশা দেখিয়েছে নতুন ও পুরনো অভিনেতা অভিনেত্রীদের। তারা শিল্পী। তারা সম্পদ। তাদের হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সিনেমায় সুযোগ না পেলে টিভি সিরিজে। প্রত্যেকেই সমান দাবী রাখে ইন্ডাস্ট্রিতে।

পোস্ট প্রোডাকশনে বোধহয় পরিচালক ভুলে গিয়েছিলেন এডিট টেবিল শুধু কেটে কুটে জোড়া দেওয়ার জন্য নয়। প্রয়োজনে বাড়তি মেদ ঝেড়ে ফেলতে হয়। সবই পরিশ্রম মাখা সৃষ্টি বলে সমবেদনার কোন জায়গা থাকা উচিত নয়। নয় খানা এপিসোড পূর্ণতা পায় সাত ঘন্টা চুয়াল্লিশ মিনিটে। দৈর্ঘ্য বড় হওয়া অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না টিভি সিরিজে যদি তার বুনোট ঢিলে না হয়। আরয়া-তে বহু জায়গা ছিল যা বাদ দিলে গল্পে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ত না। বরং তা আরো বেশি ঠাসা হত। এইসব সেন্টিমেন্ট আদতে দূর্বলতাকে জাহির করে।

শুরুতে, শেষে এবং ঘুরেফিরে বারবার আসে সুস্মিতা সেন। গৃহবধুর চরিত্র থেকে একটু একটু করে নিজেকে ভেঙে অন্য একটি চরিত্রে স্থাপন করার কাজে আরয়া যথাযথ। সুস্মিতা সেনের ঈর্শ্বনীয় সৌন্দর্যে সময়ের দীর্ঘ পা-কে একফোঁটা মাড়িয়ে যেতে দেয়নি নিজে। তার চাহনী, শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতি মুহূর্ত She is on fire। সে অসামান্য। তাকে আবার ফিরে পাওয়ার জন্য আপাতত অপেক্ষা আরয়া-২-এর।

Related News

Back to top button