লাইফ স্টাইল

অ্যাডভেঞ্চার ও পর্বতারোহণের সহজ পাঠ,লিখেছেন বিশাল বিশ্বাস

এই adeventure কথাটির অর্থ কী ? কী লাভ এই adventure করে ? আমাদের কী শেখায় এই adventure ? আরো অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে তৈরি হয়। এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে “পাহাড় ও অ্যাডভেঞ্চার”।

Bengal Live ডেস্কঃ

সূচনাঃ 

আমাদের সকলের প্রিয় দেশ এই ভারতবর্ষ। এই ভারতবর্ষে নানান ধরণের এবং ভাষার মানুষের বসবাস। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ভারতবর্ষের মতো এত বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় না। হয়তো জলবায়ুর ও ভূমির তারতম্যের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। যেমন হিমালয়ের সুউচ্চ প্রদেশে যেসমস্ত জনজাতির বসবাস, তাঁদের প্রতিদিনের জীবনটা, আমরা যারা সমতলে থাকি তাদের তুলনায় অনেকটাই কঠিন। কিন্ত তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনটাকে সুন্দর ভাবে সেখানকার প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিয়েছেন। সুযোগ-সুবিধেগুলোকে তারা তাদের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছেন। তাদের কাছে হয়তো এই প্রতিদিনের জীবনটা খুবই Adventurous ।

(বরং তাঁরা হয়তো ভাবেন আমরা যারা সমতলে থাকি তাদের জীবনটা বড্ড জটিল এবং দূষণে ভরা। যাই হোক, এই দ্বন্দ্বে না যাওয়াই শ্রেয়।)

কিন্তু এই adeventure কথাটির অর্থ কী ? কী লাভ এই adventure করে ? আমাদের কী শেখায় এই adventure ? আরো অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে তৈরি হয়। এই সব প্রশ্নের উত্তর আমরা খোঁজার চেষ্টা করবো এই লেখার মাধ্যমে।

travel and adventure

প্রথমে জানার চেষ্টা করি adventure অথবা adventure sports এই কথাগুলোর অর্থ কী ? adventure হলো এক ধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূতি। এটি হলো আমাদের প্রতিদিনের সুখ-সাচ্ছন্দে ভরা জীবন থেকে একটু বেরিয়ে এসে, একটু অন্যরকম ভাবে, কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে, যে কোনো রকম রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং তার সাথে আনন্দ উপভোগ করা। আর স্বাভাবিক ভাবেই যে খেলাগুলোর মাধ্যমে এই adventure-এর অনুভূতি হয়ে থাকে সেসব খেলাকেই সাধারণ ভাবে adventure sports বলা হয়ে থাকে। আমরা প্রতিদিনের জীবনে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু adventutre করে থাকি। কিন্তু আমরা সেগুলোকে কখনোই সেভাবে লক্ষ্য করি না। কারণ সেগুলো আমাদের চলার পথে প্রায়ই কারোও না কারোর সাথে প্রতিদিনই ঘটে থাকে। সুতরাং এখানে নতুন কিছু নেই , বরং এতে রয়েছে ভীষণ একঘেয়েমি। কিন্তু আমরা যদি সেই adventure কে বা adventure sports কে ভালোবাসতে পারি তাহলে , আমাদের প্রতিদিন এর জীবনের উত্থান ও পতনগুলো, মানে এককথায় জীবনের adventure গুলোকে আমরা আরও ভালো ভাবে আনন্দের সাথে কাটিয়ে উঠতে পারবো। এককথায় adventure মানুষকে বাঁচতে শেখায়। জীবনের ভেঙে পরার মুহূর্তগুলোতে মনোবল জোগায়, আর জীবনের যেকোনো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে যাওয়ার সাহস জোগায়।

“Jobs fill your pocket. Adventures fill your soul.”
– by Jaime Lyn Beatty

 

Adventure ও তার রূপরেখাঃ

অজানাকে জানার নেশা থেকেই আসে adventure। এই adventure এর খোঁজেই পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো দা গামা সুদূর দেশ থেকে সব প্রতিকূলতাকে সঙ্গে করে ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং সুদূর নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা এডমন্ড হিলারি এক নেপালি শেরপা তেনজিং নর্গে কে সঙ্গে করে পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বত অভিযান করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে এই পৃথিবীতে যা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না।

এডমন্ড হিলারি সঙ্গে নেপালি শেরপা তেনজিং নর্গে
এডমন্ড হিলারি সঙ্গে তেনজিং নর্গে

প্রতি বছর adventure এর খোঁজে বহু বিদেশি পর্যটক আমাদের এই দেশ ভারতবর্ষে আসেন। বলাই বাহুল্য আমরা ভারতবাসীরা এই adventure sports এর বিষয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। কিন্তু প্রতি বছর ভারতীয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই sports এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। আর বলতে দ্বিধা নেই এই adventure এর বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে আমাদের বাঙালিরাই।

adventure sports এর অনেকগুলো ভাগ রয়েছে , কিছু স্থলভাগ(land base) এর কিছু জল ভাগ(water base) এর, আর কিছু আকাশ ভাগের(air base)। প্রধানত এই তিনটি ভাগেই ভাগ করা হয়। বিষয়টি একটু ভেঙে বলা যাক।

hiking walking

যে সব Adventure Sports স্থলভাগ মানে ভূপৃষ্ঠের ওপর হয়ে থাকে তাদের স্থলভাগের বা Land Base adventure spots বলা হয়। তেমনি যেসব adventure sports জলভাগ ও আকাশে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের ওপরে হয়ে থাকে তাদের যথাক্রমে Water base ও Air base adventure sports বলা হয়। এই সকল প্রকারের adventure sports গুলি ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে প্রায় সারা বছরই হয়ে থাকে। এই সকল adventure স্পোর্টস এর মাঝে বাঙালিদের সবচেয়ে প্রিয় adventure sport হল Mountaineering অর্থাৎ সোজা বাংলায় যাকে বলে পর্বত আরোহণ। বাঙালিরা বরাবরই ভ্রমণ পিপাসু । এই ঘুরে বেড়ানোর সাথে যদি একটু adventure এর স্বাদ পাওয়া যায়, তবে যেন আনন্দটাকে আরো বেশি করে উপভোগ করা যায়। বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় হয়তো আমরা সকলেই পড়েছি ছোটবেলায়। সেই থেকেই পাহাড় বিষয়টা যেন আমাদের আরো বেশি ভালো লাগার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু পাহাড়ে তো শুধু চলে গেলে হবে না। জানতে হবে কিছু নিয়ম কানুন। শিখতে হবে কিছু বিধিনিষেধ। যাতে পাহাড়ের আরো কাছে চলে যাওয়া যায় নিরাপদে এবং নির্ভয়ে।

“There will be no lack of adventure of the mind and body for those who are prepared to venture into uncharted seas and climb unknown peaks”
– Pandit Jawaharlal Neheru

 

অন্য রূপে পাহাড়কে চেনাঃ 

প্রথমে আমরা পাহাড়ে ঘোরার বিষয়টিকে চলুন একটু অন্য রকম ভাবে দেখি। পাহাড়ে আমরা অনেকেই বছরে প্রায় একবার করে যাই এবং সেখানে গিয়ে কিছু কাঠের ঘর বা কোথাও hotel এ গিয়ে থাকি। কিছু দিনের জন্য একঘেয়েমি জীবন থেকে ছুটি নিই। একাকি বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিছু মূল্যবান সময় কাটিয়ে আসি। আর সাথে নিয়ে আসি কিছু স্মৃতি। কিছু মানুষের কাছে পাহাড় মানে এটাই। কিন্তু এই ভাবে তো সবাই ঘোরে। সত্যিকথা বলতে এই রকম ভাবে ঘোরার মধ্যে adventure এর কিছু নেই। এ হলো এক সাধারণ holiday tour তাছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আমি যে ঘোরার কথা বলছি সেটা কিন্তু একটু আলাদা।

আচ্ছা ভাবুনতো পাহাড়ে গিয়ে দূরে যে আবছা মেঘে ঢাকা কিছু উঁচু উঁচু শৃঙ্গ দেখি সেখানে চলে গেলে কেমন হয় ? যেখানে কোনো মানুষজন থাকে না। রাত কাটাতে হয় tent এর ভেতরে , খেতে হয় নিজে আগুন ধরিয়ে রান্না করে। এবং সবকিছু বয়ে নিয়ে যেতে হয় নিজেকেই। হয়তো কখনো পুরোটা দিন জলের সন্ধানেই কেটে যায়। আবার কখনও জঙ্গলের মাঝে আস্তানা বানাতেই পুরো দিনটা কেটে যায়। বেশ রোমাঞ্চকর, তাই না ? কিন্তু এসব করা তো বেশ বিপদজনক বলে মনে হয়। আসলে adventure করতে গেলে একটু ঝুঁকি নিতেই হয়। তা নাহলে সেটি আর adveturous থাকে না। আর আমরা যারা পর্বতারোহী, মানে mountaineer তারা এই ঝুঁকি নেওয়াটাকে আমাদের ভাষায় বলে থাকি calculative risk। মানে হলো, মেপে ঝুঁকি নেওয়া। আর এর জন্যে আমাদের, মানে mountaineer দের কিছু training নিতে হয়। ভারতবর্ষে এরম হাতেগোনা কিছু সংখ্যক সরকারী institution আছে যেখানে এই বিষয়ক ট্রেনিং দেওয়া হয়ে থাকে। দীর্ঘ দিনের training আর অভিজ্ঞতার পর একজন mountaineer তৈরি হয়। আর একজন পর্বতারোহী হতে সবার আগে আরো যেটা লাগে সেটা হলো অদম্য ইচ্ছা আর মনোবল। যে মনোবল সবরকম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে হার মানায়। কারণ পাহাড় যতটা দেখতে সুন্দর, ততটাই কঠিন এবং বিপদজনক। পৃথিবী বিখ্যাত যিনি তাঁর প্রবল ইচ্ছে শক্তি আর মনবলকে কাজে লাগিয়ে বিনা অক্সিজেনে তাঁর Mount Everest অভিযান সফল ভাবে সম্পন্ন করেছিলেন।
তাঁর কথায় –
“Mountains are not fair or unfair, they are just dangerous.”mountaineer sir Reinhold Messner

পর্বতারোহণ শিক্ষাঃ 

পর্বতারোহী হওয়ার প্রথম ধাপ হলো উপযুক্ত training। একজন পর্বতারোহী হতে গেলে কোন training এর প্রয়োজন ? কীভাবে হয় এই training? কিছুটা theory আর কিছুটা practical এই দুটি জিনিস নিয়েই হয় ট্রেনিং। এই লেঝাটিতে আমি কিছুটা theorytical part এর বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করবো এই নতুন বিষয়টি সম্মন্ধে আপনাদের জানতে বেশ ভালোই লাগবে এবং পর্বত আরোহনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি আপনাদের কাছে আরো অনেক সহজ হবে।

কীভাবে ভর্তি হবো সেই পাহাড় এর বিদ্যালয়গুলিতে ? কিছুই না, ইন্টারনেটের যুগে ঘরে বসে internet search করে, নির্দিষ্ট ভর্তির সময় দেখে, online এ fee জমা করলেই আপনার seat book হয়ে যাবে। আর সেই মতো তাদের নির্দিষ্ট রিপোর্টিং time এ চলে গেলেই হয়ে যাবে । তবে এখানে বলে রাখা ভালো, শুধু ফর্ম ভর্তি করে সেখানে সময় মতো চলে গেলেই হলো না । এই training এর শুরুতেই, এই বিদ্যালয়গুলি আপনার শারীরিক ক্ষমতার একটা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। সেই test এ পাশ না করলে আপনাকে বাতিল করে দেওয়া হয়। কারণ তাদের বক্তব্য এই পাহাড়ে আসতে হলে আপনার থাকতে হবে কঠিন শারীরিক ক্ষমতা আর মনোবল। তাই যতদিন সেই বিদ্যালয়ে না যাওয়া হয় ততো দিন বেশ কিছু পদ্ধতিতে ও বেশ কিছু রকমের শরীরচর্চা আগে থেকেই করে নেওয়া উচিত।। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুরু হয় কিছু অভিজ্ঞ manuntaineer এর তত্ত্বাবধানে পর্বতারোহণ শিক্ষা। এই institute গুলোর instructor রা হলেন খুবই অভিজ্ঞ আর তাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা এবং প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার অসম্ভব দক্ষতা।

কিছু mountaineering institute এর নাম উল্লেখ করা হল-

  • Himalayan Mountaineering Institute, Darjeeling.
  • Nehru Institute Of Mountaineering , Uttarkashi
  • Jawahar Institute of Mountaineering, Jammu & Kashmir
  • National Institute of Mountaineering and Allied Sports,Arunachal Pradesh

Atal Bihari Vajpayee Institute of Mountaineering and Allied Sports, Manaliতবে এই সব institute গুলোর মধ্যে সবচাইতে পুরোনো এবং বহুল পরিচিত আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং এ অবস্থিত Himalayan Mountaineering Institute(HMI) ।বিদেশেও এই institute এর নামডাক শোনা যায়। এমনকি বাইরের দেশের বহু ছেলেমেয়েরা এই ই institute এ আসে পর্বতারোহণ সম্মন্ধে শিক্ষা লাভ করার জন্য । এই institute টি স্থাপিত হয় শেরপা তেনজিং নর্গে আর এডমন্ড হিলারীর Mount Everest অভিযান সফলের ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর দ্বারা। ভারতবর্ষে পর্বতারোহণ বা Mountaineering কে একটি পরিকল্পিত রূপ দানের জন্য এই institute এর সূচনা করা হয়। Major Nandu Jayal ছিলেন এই institute এর Founding Principal আর SherpaTanzing Norge ছিলেন Director of Field Training।

“The Institute trains young men not only to climb Himalayan peaks, but also create in them an urge to climb peaks of human endeavour, the Himalayas from time immemorial had attracted people and inspired them to discover nature s bountiful gifts found there and influenced Indian minds as evident from old scriptures, books and epics of the mythology of India.”
– Pandit Jawaharlal

Pandit Jawaharlal

লিখেছেনঃ  বিশাল বিশ্বাস
(Mountaineering Instructor)

www.lonehimalaya.com

 

Related News

Back to top button