পোর্টজিন

সীতা থেকে মিতা… নিরাপত্তাহীন একটা অধ্যায়। আদৌ পাল্টেছে কি কিছু?

শান্তনু মিশ্র

Nblive পোর্টজিনঃ এটা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। হ্যাঁ মিতা। আর দুটো দিন বা ধরুন চার।  আমি ভুলেই যাব। আর এটাই আমার কর্তব্য। কারণ, নিমেষের মধ্যে চ্যানেল পাল্টে দেয়ার রিমোট তো আমিই অপারেট করি। তাই না?

ভবিষ্যতের রেফারেন্স হওয়ার যতটুকু যোগ্যতা মিতার পাওনা ছিল, সেটুকু ও পেয়ে গেছে।  তাই নিশ্চিন্তে এবার অন্য ইস্যু।
চিয়ার্স…

এই কটা দিন আমার মনে পড়েছে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ। সীতার অগ্নিপরীক্ষা। সুর্পনখা। আর এসব সেরেই ধুপ করে আছড়ে পড়েছি এই দশক। মানে ধরুন পার্কস্ট্রীট, দিল্লি, কিংবা মিতা!  মানে প্রতিটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটা ঘৃণ্য ছোঁয়াচ ধরেই রেখেছে অভিব্যক্তি।

আর তাই, এখন, নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদির বুলি কপচাবো। ফলস্বরূপ, শিরা উপশিরা মজ্জা কিংবা কানাঘুষোয় মুগ্ধতা ছুঁড়ে দেব ঠিক। আপনি আমায় চিনবেন আধুনিক ডাকনামে। ব্যস…
তবে স্যর, এসবের বাইরেও একটা প্রশ্ন– সীতা থেকে মিতা অবধি, এই লম্বা সময় জুড়ে সমস্যাটা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই কি?
কেন?

এই যে নিরাপত্তাহীন একটা লম্বা ছায়া। আজ সকালেও কাগজে পড়েছি, অন্য কোনো মিতার গল্প। মিতার জন্য সই সংগ্রহ করতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছি একাধিক মিতার পরিজনের।

মিতার হত্যাকারীদের শাস্তি হোক। এটাই চাই।
কিন্তু মহিলাদের মেরুদণ্ড আরো শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন নেই কি?
আমাদের এই জাস্ট বুলি আওড়ানো মানসিকতার যুগান্তকারী পরিবর্তন কি খুব জরুরি নয়?
দীর্ঘ অত্যাচারের ফলাফলই তো মিতা। কই, সেও তো রুখে দাঁড়াতে পারলো না!
কেন???

zz1

পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মেয়েদের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

আপনি বলবেন, পুরুষতন্ত্র তো নারীশিক্ষা, নারী-স্বাধীনতার কথা বলেই। হ্যাঁ। বলে। অবশ্যই বলে।কিন্তু কতদূর?

যতদূর অবধি একজন নারীকে প্রশ্নহীন রাখা যায়। ঠিক ততদূর।

আপনি বলতেই পারেন, তা বলে মিতার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে একটা প্রতিবাদ হবে না???

নিশ্চয় হবে।

কিন্তু এ দায়িত্বটা কি এক্ষুণি এক্ষুণি নেওয়াটাও জরুরি নয়, যে, কাল আবার কোনো মিতা যেন শিরোনামে না আসে!!!
মানে এই রুখে দাঁড়ানো ব্যাপারটা যেন মৃত্যুর আগেই হয়!
এবং সেই দায়িত্ব পালনে মিতারা যেন পারদর্শী হয়ে ওঠে!
অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা যেন সম্মানজনক হয়! এবং এই স্বাধীনতার সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক দয়া দাক্ষিণ্য গোছের কোনো মানসিকতার সম্পর্ক না থাকে!
“পতির পুন্যে সতীর পুন্য”-এই মনুকেন্দ্রিকতা থেকে যেন রেহাই পায় নারীরা!

তা যদি না হয়, তবে মিতারা তো আজীবন উদাহরণ হিসেবেই পুষ্টি যোগাবে এই পুরুষতন্ত্রের! তারপর একদিন মানে কোনো একদিন মিতাকে ছাপিয়ে যাবে আর কেউ। কিংবা একাসনে বসবে হয়তো।

সেদিন উদ্বিগ্ন আমরা, কোনো এক মফস্বল… রবীন্দ্র ভবন… দুপুর ১টা… সেমিনার হবে।
বিষয়:”নারী সুরক্ষা”

সত্য সেলুকাস!

Related News

Back to top button