পোর্টজিন

“সন্দেহ” লিখেছেন সমর আচার্য্য

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

 

 

বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে অবনীর l তাই প্রায় ই বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরে এবং পাঠাতেই হয় l না হলে কেঁদে কেটে একসা করে l
অবনীর বাবা মা খুব স্নেহ করেন বৌমা কে l তাই তারা আর বেশি বাধা দেন না l ছেলের গোসা হলে বলেন, এইতো মাত্র আটমাস বিয়ে হয়েছে, এখন তো একটু বাবার বাড়ি যেতে মন চাইবেই l আমার ই কম ইচ্ছা করতো, কিন্তু তোর বাবা, ঠাকমা ঠাকুরদা কোনদিন ই যেতে দিতে চাইতো না l সেই কালে ভদ্রে অনুষ্ঠান উৎসব থাকলে যাওয়া জুটতো, বলে স্বামীর দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে নেয় মা সরলাবালা l
আজ প্রায় এক সপ্তাহ হলো অবনীর বৌ পারুল বাবার বাড়ি গিয়েছে, আসার নাম নেই l রবিবার দুপুরে সময় আর কাটছিলো না অবনীর l এটা ওটা ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে হঠাৎ পারুলের শাড়ি গুলোর দিকে নজর পড়লো l এই শাড়িটা তো কোনদিন দেখে নি l নিজেতো দেয় ই নি, বাড়ির কেউ বা কোন আত্মীয় স্বজন গিফট দিয়েছে বলেও তার মনে পড়ছে না l
অবনীর মনে কেমন খটকা লাগলো l সঙ্গে সঙ্গে মাকে দেখালো শাড়িটা l মা বললেন তিনিও কোনদিন দেখেননি শাড়িটা, তবে কয়েকদিন আগে তুই অফিসে থাকার সময় একটা তোর বয়সী ছেলে এসেছিলো, হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে l হয়তো সেটাই এই শাড়িটা l
অবনী ফোন লাগালো পারুল কে l খবরাখবর নেওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলো, আলমারিতে একটা নতুন শাড়ি দেখলাম, ওটা কার শাড়ি? কৈ আমি তো কিছু জানি না l
ও প্রান্ত থেকে পারুলের সশব্দে হাসি ভেসে এলো, আরে যা, আমি তোমাকে বলতে একদম ভুলে গেছি l মা কে ও বলা হয়নি l ওটা আমার এক দূর সম্পর্কের দাদা দিয়েছে l
বলেই বলে, এখন রাখো, কাল বাড়ি ফিরে সব বলবো l
কেন যেন সারারাত ঘুম হলো না অবনীর l বারবার ঘুরে ফিরে ঐ শাড়িটার কথাই মনে পড়ছে l অথচ এতো একটা সামান্য ব্যাপার, এমন হতেই পারে, যেটা তাকে বলতে পারেনি বা বলা হয়ে ওঠেনি l মনকে অনেক সান্তনা দিয়েও যেন মন শান্ত হচ্ছে না l
পরেরদিন সকালে পারুল ফিরলো l সামান্য ঐ শাড়িটা নিয়ে অবনীর এত কৌতূহল প্রথমে হাসি মুখেই উপভোগ করছিল পারুল, কিন্তু একটা সময় সে বলে উঠলো, কি বলতে চাইছো তুমি? তোমার কথাবার্তা কিন্তু আমার ভালো লাগছে না l যদি বিশ্বাস না হয় তবে এই নাও ফোন নাম্বার, ফোন করে দেখ, আমি ঠিক বলছি কি না l
পারুলের উগ্র মূর্তি দেখে অবনী আর ঘাটাতে সাহস পায় না l
অবনীর মন শান্ত হতে চাইছে না l পারুলের গতিবিধির উপর কেমন একটা নিজের অজান্তেই নজর রাখতে শুরু করলো l কেন করছে এমন তা নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না l
সেদিনটাও ছিল রবিবার l সেই ছেলেটি আবার এলো l এবার এসেই অবনীর বাবা মার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলে, কিছু মনে করবেন না আপনারা, সেদিন বড্ড তাড়া ছিল, তাই আপনাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারিনি l তারপর অবনীর দিকে তাকিয়ে বলে, আর তুমি তো বাড়িই ছিলে না ভায়া l যাইহোক শোন, আমি অজয়, অজয় রায় l পারুল আমার অনেক দূর সম্পর্কের বোন l ওদের সঙ্গে খুব মেলামেশা না থাকলেও ওর বিয়েতে নিমন্ত্রণ ছিল l নানা ঝামেলায় আসতে পারিনি l
সেদিন ওর মার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে বাড়ি এসে বিয়ের গিফ্ট টা দিয়ে গিয়েছি l আজ আর চা না খেয়ে যাচ্ছি না l বলেই পারুলের দিকে চেয়ে হাসিমুখে বলে, কিরে, চা খাওয়াবি তো?
পারুল খিলখিল করে হেসে বলে তুমি এখনো একই রকম রয়ে গেলে l অবনীর বাবা মা ও বলেন, বসো, বসো বাবা, আজ শুধু চা না, এক্কেবারে দুপুরের খাওয়াটা সেরেই যাবে l
পারুল ও বলে, হ্যাঁ সেই ভালো l আজ খেয়ে দেয়েই তোমাকে যেতে হবে l বলে ত্রস্ত পদে অন্য ঘরে চলে যায় l
পারুল চলে যেতেই অবনী বলে, আপনার কেমন বোন হয় ও, এই মানে ওর বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা?
অজয় বলে, সম্পর্কটা বাবার তরফের নয়, পারুলের মায়ের তরফের l পারুলের মামা আমার বন্ধু l আমরা একই গ্রামে থাকি l
যাইহোক দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরেই যেতে হলো অজয় কে l
অজয় যতক্ষণ ছিল বাড়িতে, পারুলের মুখখানা খুশিতে ঝলমল করছিল l পারুল এবং অজয় একে অপরের দিকে যে ভাবে তাকাচ্ছিলো তাতে অবনীর খুব হিংসা, সঙ্গে সন্দেহ ও হচ্ছিলো l সে একবার পারুলের দিকে একবার অজয়ের দিকে চেয়ে কি যেন বুঝতে চেষ্টা করছিল l মনের মধ্যে একটা যন্ত্রনা অনুভব করছিল সে l
একটা সন্দেহের বীজ তার মনে কেমন করে রোপিত হলো, তা সে নিজেই বুঝতে পারছিলো না l
নিজের মনকে নিজেই বলে ওঠে একেই কি বলে সন্দেহ?

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।
                

Related News

Back to top button