পোর্টজিন

স্রোতের ফুল – সুমন ব্যানার্জি

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

bengali poem portzine suman banerjee

১. ভেসে যাচ্ছে জেলের সরু নৌকাটা।মাছের মত দুলছে , ভাসছে।মুখভরা হাসি রোদ্দুরে ঝিকমিক করছে।

নদী নয় , মা অফুরন্ত স্নেহ বিছিয়ে রেখেছে।

২. ঘাটের ধারে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা মূর্তিগুলো ধীরে ধীরে ধুয়ে যায়।ওগুলোর আর ফুলের দরকার নেই !

নদীর ঘাটে কত জন্মান্তরের পদচিহ্ন আঁকা থাকে।কেউ দেখে না। প্রতিদিন স্রোত এসে ধুয়ে দেয়।চুম্বন করে যায় পাখি।

৩. গানের ইস্কুলের পাশ থেকে মৃগনাভির গন্ধ আসে।শীত শেষ হবার পর আকাশ অনেক বড় হয়ে যায় , আলো অনেক ক্ষণ খেলা করে মাছরাঙার সঙ্গে।অনেক নক্ষত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।

মফঃস্বল এই রকমই হয়। চোরা টান একমাত্র সাইকেলেই থাকে।

৪. শহরের সব বাড়িই এখন আকাশ ছুঁতে চায়।সড়ক থেকে গলির মোড় সবাই এখন সুখী পরিবার। নিখুঁত ফটোগ্রাফের মত।

একজন জলছবি আঁকে। কোথাও রঙ একটু কম বেশি হয়ে যায়।নিজের মনে হেসে ওঠে।

৫. ছাদে রাখা আচারের সিসিতে পিঁপড়ে ছেয়ে গেছে।পাশের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির জিভটা সরস হয়েছে। ঠোঁট দু’টো কামড়াচ্ছে।

আলতো হাওয়ার সঙ্গে হঠাৎ বৃষ্টিতে কদম গাছ থেকে ঝরে পড়ল কয়েকটা কদম ফুল।

৬. শিশুটি একরাশ তুলো পাকাচ্ছে চাঁদকে দেখে।
শিল্পী গোধূলির কাঁচা কমলা রঙ টানতে চাইছে তুলিতে।
কবির শব্দেরা একটু নড়তে পারছে না।আহত কাকের মত বসে আছে।

একলা মানুষ তাকিয়ে থাকে সাবেক রঙচটা ল্যাম্পপোস্টের দিকে।

৭. পৃথিবীও তো আবর্তনে ক্লান্ত হয়।কেউ না জানলেও চাঁদ নীরবে ছায়া বিছিয়ে দেয়।

মানুষ ধ্বস্ত হলে বিশ্রাম নেয় একক স্মৃতির কাছে।

৮. জলপ্রপাতের নীচে অনেক হরিণেরা চান করে।
পাতার পোশাক পরে আর কারা নেমে আসে জলে ?
মেঘমল্লার বেজে ওঠে।নির্জন এমন শব্দময় হয় !

৯. মানুষ যত ভারী হয় তত একা হয়।যত উঁচুতে উঠতে চায় তত স্নায়ুতট ভূকম্পন প্রবণ হয়ে ওঠে।

আমার মা কবিতা বুঝত না।সন্দর্ভ বুঝত না। সৌন্দর্য ঠিক বুঝেছিল।তাই তিনি পাখি হতে চেয়েছিলেন।

১০. একটা প্রসন্ন হাওয়া গায়ে এসে লাগছে।বলছে সব গুছিয়ে নে।কোথাও থিতু হয়ে বস্ চুপচাপ।অনেক তো হল !

আমার কোন পথিকদেবতা নেই অপুর মত।

১১. আলমারির এক কোণে বহু বছর পড়ে থাকা মৃত ঠাকুমার ছেঁড়াখোঁড়া সাদা শাড়িটা ছিন্ন শিকড়ের মতো গুম খেয়ে আছে।একদিন একটা প্রজাপতি কোথা থেকে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে ওখানে এসে বসল।

স্মৃতি অগাধ জল।অনেক প্রিয় মুখ সজল চোখে চেয়ে আছে।

১২. পাখিরা পুড়ে গেলে তার ছাইয়ের রঙ কেমন হয় দেখিনি।দেখিনি ওদের হাড় কঙ্কাল।দেখিনি আমার পূর্ব পুরুষদের মুখও।

ছাদের ওপরে ঘোরা পাখিদের মনে হয় আমার জন্মান্তরের মানুষ।সবারই ছাদে ওঠার সিঁড়ি এত রহস্যময়।

১৩. শুকনো হলদে পাতার পাহাড়।ছবি দেখে মনে হচ্ছে দূর থেকে গাছের রঙ কোনটা সবুজ,হলুদ,বেগুনি। মাঝখানে একট ডাকবাক্স।

ওখানে আর চিঠি জমা হয় না।অনেক স্বপ্ন জমিয়ে রাখা একাকী মানুষ যেমন হয়।

১৪. চোখে দেখলেই কারুর সঙ্গে মনের তরঙ্গ মিলে যায়।নিমেষে ভেতরের সব পাতাগুলো কচি সবুজ হয়ে দুলে ওঠে।

ও সব ফিলোজফি-টিলোজফি , বিরহ বেদনা বুঝি না ভালোবাসার ব্যাপারে।একজন ধাক্কা খাওয়া মানুষের কষ্ট হয় নিরুত্তর থাকলে।

১৫. নরম প্রদীপের আলোয় লক্ষ্মীর আঁকা পাগুলো অলৌকিক মনে হচ্ছে।লক্ষ্মীর ঘট উপছে পড়ছে ফুলে।পাঁচালির অক্ষরবৃত্ত ঘিরে ধরছে।

শহর ভাঙছে।নাড়ু,সন্দেশ,পায়েস,খই,মুড়কি পাঁচ মেশালিতে এসে লাগছে পেলব জ্যোৎস্নার আলো।ছলছল করছে লক্ষ্মীর চোখ।

১৬. প্রতিদিন খুব ভোরে আর গভীর রাতে সব মানুষ পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে যায়।আবার ফিরে আসে।অভিনয় শুরু করে।চোখে মুখে বলি রেখা পড়ে।আক্রোশে থরথর করে কাঁপে।

হাল্কা আকাশি ফ্রক পরে একটা বাচ্ছা মেয়ে প্রতিদিন ভোরে খেলে।আবার কোথায় হারিয়ে যায়। প্রতিদিন দেখি চুপ করে।

১৭. সাদা কাগজ ফুলে পৃথিবী , গোলাপি কাগজ ফুলে চাঁদ আর হলুদ কাগজ ফুলে মহাকাশ সেজে উঠেছে।

জেগে উঠেছে পৃথিবীর সব আগ্নেয়গিরি।লাভা নয় নদীর মত নীল রঙ ফেটে বেরিয়ে আসছে।বেল ফুলের মত গন্ধ।

পুরীর সমুদ্র মোহন বাঁশি শুনে আকুল রাধিকার মত নেচে উঠছে।চৈতন্যের প্রত্নস্বর হা কৃষ্ণ , হা কৃষ্ণ …

১৮. গামলায় রাখা জল দুলছে পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসা হিন্দি গানের কোন লিরিকে।শ্যাওলা ধরা পাঁচিলের ওপর এক ফাঁকে একটা চড়ুই পাখি কুটকুট করে কীসব করছে। পৃথিবীর প্রতিটা পাড়া এভাবেই চলছে …

কাটা মাছের আঁশের দিকে চেয়ে আছে একটা বেড়াল।আমি দেখছি অটুট মাকড়সার জ্বাল পাঁচিল জুড়ে।ভেঙে গেছে আমাদের বন্ধুবেলা , একান্নবর্তী।

১৯. ইতিহাস বইয়ের প্রত্যেকটা সালই এক একটি রূপকথা। ইংরেজি আর বাংলা বইয়ের প্রত্যেকটি লাইন আসলে কবিতা।

বোবা দুপুরের রেডিওটার কথা মনে পড়ে। জীবনে ঝগড়াগুলোও কত মিষ্টি ছিল , কথারা কত অভিমানী ছিল।

ইংরেজিতে কেউ ঝগড়া করত না। পৃথিবীতে এত নেটওয়ার্ক ছিল না।

২০. বারান্দা থেকে রাস্তাকে মনে হয় প্যারীস।ছাদ থেকে শহরকে মনে হয় মহাকাশ।আরও ওপরে উঠলে সব আলোকে আকাশপ্রদীপ।

সবাই স্থির হয়ে আছে।কেবল তুমি বাউলের সুরের মত নদী।

 

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

 

 

Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button