পোর্টজিন

হাগিয়া সোফিয়াঃ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নির্মাণ ও বিনির্মাণ – সুনন্দা ঢালী

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

bangla golpo sunanda dhali

 

তুরস্কের দেড় হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী হাগিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া বাইজেন্টাইন সভ্যতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন। এটি একটি জাদুঘর। যা কিনা মসজিদ হতে চলছে। আগে ছিল মসজিদই। আবার তার আগে ছিল চার্চ। মাথায় সব জট পাকিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। তাহলে এক এক করে গল্পটা বলি।

৫২৩ থেকে ৫৩৭ সাল: ইস্তানবুল অর্থাৎ মধ্যযুগের রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল। রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ন প্রথমের আদেশে কনস্টান্টিনোপলে তৈরি করা হল তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ খ্রিস্টান ক্যাথিড্রাল, অর্থোডক্স গির্জা। এটি সর্বপ্রথম এমন একটি চমৎকার সৃষ্টি, যেখানে অভ্যন্তরীণ কারুকার্য একেবারেই চোখ ধাঁধানো ছিল। ওপরের গম্বুজটি বসানো হয়েছিল বর্গাকৃতির ওপর। স্থাপত্যটির নিখুঁত জ্যামিতিক নকশা করেন গ্রীক জিওমিটার ইসিডোর এবং ট্রেলসের অ্যান্থিমিয়াস। নিকা দাঙ্গা, ৫৩২-য়ে শহরের অধিকাংশ স্থান ধ্বংস হয়। রেহাই পায়নি এটিও। ইমারতটি মেরামত করার পর গম্বুজটির উচ্চতা আরো বাড়ানো হয়।

গ্রীক ভাষায় চার্চটির পুরো নাম নাৎস তিস হাগাস টু থিও সফিয়াস, লিট। আক্ষরিক অর্থে ঈশ্বরের পবিত্র জ্ঞানের মন্দির।

১২০৪ সাল: চতুর্থ ক্রুসেডারদের দ্বারা লাতিন সাম্রাজ্যের অধীনে রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রালে পরিণত করা হয়। ১২৬১ সাল পর্যন্ত এটি ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল হিসেবে ছিল।

১২৬১ সাল: বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ফিরে আসার পর আবার চার্চটি ক্ষমতায় এলে এটিকে পুনরায় অর্থোডক্স চার্চ হিসেবে পুনরুদ্ধার করা হয়। ২৯ বার নানা জাতির রাজা এই রাজধানী, কনস্টান্টিনোপল দখলের চেষ্টা করেন। এমনকি বহু মুসলিম শাসক এই সহস্রাধিক বছরের পুরনো রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপর এলেন দ্বিতীয় মুহাম্মদ। যুদ্ধে জয় করলেন রাজধানী। তিনি হলেন ফাতিহ বা নগরদোর উন্মোচনকারী। সুলতানের নজর পড়লো আয়া সোফিয়ার ওপর। মুসলিম আইনশাস্ত্র অনুযায়ী, কোনো মুসলিম শহরে অমুসলিমদের জৌলুসপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা থাকবে না, যা মসজিদের চেয়ে বৃহৎ ও অধিক দৃষ্টিগোচর। সুতরাং হয় ভেঙে ফেলা, না হলে মসজিদে রূপান্তর এই দুই ছিল পথ।

১৪৫৩: কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর অটোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন মুসলিম শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ সেটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করার আদেশ দেন। মহাবিশপদের চার্চ অফ দ্য হোলিত অ্যাপস্টলে স্থানান্তরিত করেন। পরে সেই স্থান শহরের ক্যাথিড্রাল হয়ে উঠেছিল। চার্চ বেল, বেদী, আইকনোস্টেসিস, অম্বো এবং ব্যাপট্রিস্টি উৎখাত ও ধ্বংস করা হয়েছিল। খ্রীষ্ট ধর্মের চিহ্ন বহনকারী সকল কিছু এমনকি যীশু, মেরি এবং সকল সাধুর চিত্রিত মোজাইকগুলি ধ্বংস করা হয়। এর পরিবর্তে যুক্ত হয় ইসলামী বৈশিষ্ট্য যেমন মিনবার, চারটি মিনার, একটি কুলঙ্গী এবং একটি মীরহাব। ১৯৩১ থেকে চার বছরের জন্য এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৩৪: কাউন্সিল অব সেস্ট, মূলত আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি কামাল আতাতুর্ক স্থানটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। উভয় ধর্মের অনুসারীদের জন্য আলাদা আলাদা প্রার্থনা কক্ষ তৈরি হয়। ১৯৩৫ থেকে জাদুঘরটি রবিবার – বৃহস্পতিবার সকাল ৯.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকত। প্রবেশ মূল্য ছিল ২৫ তুর্কি লিরা বা প্রায় ২৫০ টাকা। এটি ছিল তুরস্কের সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণের স্থান। বার্ষিক প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন দর্শনার্থীদের সমাগম হত। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় আয়া সোফিয়া।

২০২০: কাউন্সিলের আদেশ অমান্য করে সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদ বানানোর আদেশ দেন তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইপ এরদোগান। তীব্র প্রতিবাদ আসে আন্তর্জাতিক স্তরগুলি থেকে। নিন্দা জানায় ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব গির্জা, ইউনেসকো আরও অনেকে। বেশ অনেকদিন ধরেই ধর্মীয় কট্টরপন্থীরা নামাজ পড়ার জন্য এই স্থান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তুরস্কের সঙ্গে গ্রীসের সম্পর্কের অবনতি ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। এই মতবিরোধ কিরকম ভবিষ্যতের কথা জানান দিচ্ছে তা সত্যি চিন্তার।

স্থাপত্যকলার ইতিহাসে অন্য মাত্রা যোগ করেছে আয়া সোফিয়া। এটি মুসলিম, খ্রিস্টান উভয় ধর্মের কাছেই মর্যাদার। স্থাপত্যটি আরো কত নিদর্শন রাখবে তাই দেখার!

 

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9636459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Related News

Back to top button