মধ্যবিত্তের রোজনামচা – উত্তীয় ভট্টাচার্য্য

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
দাঁত কেলিয়ে খ্যালখ্যাল করে হাসার আগে ধরে নিন আপনিই সেই লোফার যার ডেলি লাইফ লেখা হবে। কী, হাসি থেমে গেল তো? কোথাকার কোন লম্পট লেখক কথা নেই বার্তা নেই উড়ে এসে জুড়ে এসে লোকের সামনে আপনার রোজনামচা লেখার নামে আলবাল ছোলার ডাল লিখে যাবে আর লোকে সেই পড়ে আপনাকে দেখে হাসবে। আপনাকেও দেঁতো হাসি হেসে সেই কিল হজম করতে হবে। ভাবখানা এই এতেই তো বীরত্ব।
খাওয়া-দাওয়া, ঘুম আর যৌনতা…এই তিন কেড়ে নিলে বাঙালির পড়ে থাকে টাকার চিন্তা আর পুরিয়াভর্তি ডিপ্রেশন। অবশ্য টাকার চিন্তা থেকেই ডিপ্রেশন আসে কিনা সেটা নিয়েও অনেক থিসিস বেরিয়েছে।
তার চেয়ে একটা সত্যিকারের জীবনী লিখুন দেখি, যেটার এমন তেজ হবে যে বেরোনোর আড়াই দিনের মাথায় বেস্টসেলার হবে। দেড় দিনের মাথায় প্রিবুক করা হাজার দশেক কপি বড়দিনের রাতের চকলেট কন্ডোমের মতো টগবগ বিক্রি হয়ে যাবে। বইমেলার পচা পকোড়া আর গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বই গছানো দাদাইদের ভয় অগ্রাহ্য করে লোকে ছুটে আসবে বইয়ের টানে। নিন্দুকেরা অবশ্য বলতে পারে পানু বই, কিংবা চটক আছে মাল নেই;কিন্তু তাতে আপনার কী? আপনি তো ততদিনে গাদাগুচ্ছের আনন্দ পুরস্কার আর বেস্টসেলারবাসা পেয়ে বসে আছেন। তাই নিন, তুলে ধরুন নিজের ওটা (কলম) আর কাজে লেগে পড়ুন।
এই যেমন আপনার দিন শুরু হয় সকাল দশটায়। বয়স একটু কম হলে আর একটা হাড়বজ্জাত বাপ্ থাকলে দশটা-টা সাতটা কী আটটা হয়ে যাওয়াও আশ্চর্য নয়। ঘুমচোখে বিছানা ছাড়ার আগে মোবাইল খোঁচাতে থাকেন খানিক। হয়তো গার্লফ্রেন্ডের গুড মর্নিং বাবু মেসেজের রিপ্লাই করেন। ভেবে দেখবেন সকালে হিসু করার আগেই কিন্তু মোবাইল ধরেন। দেখবেন ভেবে। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকেই আঠার মতো চোখ সাঁটিয়ে বাথরুমে চলেন। বহু বছরের অভ্যেসে না দেখে চলার অভ্যাস হয়ে গেছে; ঠোক্করও লাগে না আর।মোবাইল দেখতে দেখতেই মূত্র ও মলত্যাগ।
ফেসবুকীয় ট্যাগ দেখতে দেখতেই হঠাৎ চোখ পড়ে মূত্রত্যাগের যন্ত্রটির ওপরে। কালো কুচ্ছিত শুকিয়ে দড়কচা মেরে যাওয়া এই অঙ্গটি নিয়ে গতকাল রাতে প্রেমিকাকে কত অশ্লীল গল্পই না শুনিয়েছেন। সামনাসামনি দেখলে প্রেমিকা কত হতাশ হবে সেই চিন্তা কমোডে বসে মলের সাথেই ধুয়ে ফেলেন। শুরুর আধঘন্টা এভাবে কেটে যায়। চা বিস্কুট ইত্যাদি আসে। আগেই বলেছি রোজনামচায় বদমেজাজি বাপ্ একটা ভিলেনের মতো। বাপ্ এই সাতসকালে পড়তে বসাবে। না পড়লে অথবা পড়তে বসে মোবাইল গুঁতালে উত্তাল ক্যালানি।
যাই হোক, মনে মনে বাপকে খিস্তি করতে করতে ঘন্টাখানেক পড়ে নিয়ে বন্ধুকে ফোন করবেন। ফচকে বন্ধু আপনাকে মনে করিয়ে দেবে বিকেলে একটা জম্পেশ গেট টুগেদার আছে। আপনি উৎফুল্ল হয়ে জিগ্যেস করবেন সেই আগেরবার দেখা হওয়া ভারীবুকওয়ালা মেয়েটা আসবে কিনা। আগেরবার সেই মেয়েটিকে বড় হাঁ করে কলা খেতে দেখে বড়ই আনন্দিত হয়েছিলেন আপনি। সঙ্গে এক ধরণের অশ্লীল উত্তেজনা। তার খোঁজ নিতেই বন্ধুটি মনে করিয়ে দেবে আপনার প্রেমিকা আছে এবং আপনার এই গোপন ফ্যান্টাসির কথা প্রেমিকা জানলে কেঁদেকেটে একশা করবে। হয়তো মিটুও খাইয়ে দিতে পারে। মিটুর কথা শুনে আপনি সাবধান হন। অবশ্য আপনি বিবাহিত হলে এসব পরিস্থিতিই আসবে না। সোজা ঘুম থেকে উঠে বউয়ের ফর্দ ধরে বাজারে।
মফস্বল হলে মাঠফাঠ আর কলকাতা হলে লেকের ধারে দেখা করবেন বন্ধুদের সঙ্গে। বাপের প্রচুর টাকা হলে অবশ্য আলাদা কথা। তখন বারে দেখা করবেন। কোনো এক মহাপুরুষ বলে গেছেন মদের বারে বাবার ক্রেডিট কার্ডে মিনিস্কার্ট পরিহিতা লাস্যময়ী মেয়েদের মদ খাওয়ালে আলাদাই দাঁড়ায়। খুব দামি কথা। কিন্তু আপনার বাবা অত বড়লোক নন। অগত্যা মাঠঘাটই ভরসা।
মাঠে গিয়ে দেখলেন সব ছেলে পরিচিত আর গোটা চারেক মেয়ে অপরিচিত। তাদের সামনে বেশ একটা হোমরাচোমরা ভাব কী করবেন, তার আগেই বাকিরা সেই কাজে লেগে পড়েছে। আজও কোন একটা হারামি কলা নিয়ে এসেছে। কলা হল আসলে একটা টেস্টিং টুল। কোন মেয়ে কেমন তা একটা ফলই বিচার করে দেয়। সবাই সেই কলা খাচ্ছে আর আড়চোখে মেয়েদের কলা খাওয়া দেখছে। মেয়েরাও একটু করে মুখে নিচ্ছে আর পাশের জনের দিকে সংকোচভরে তাকাচ্ছে। ওই ছেলেটা দেখল না তো? ওই মেয়েটা একবারে অতটা মুখে নিয়ে নিল? ইশশ কী অসভ্য…
একটা মেয়ের বয়কাট চুল। সে আদ্দেক কলা কামড়ে বাকিটা থু করে ফেলে দিল। একে মরে গেলেও প্রেমিকা বানাবেন না পণ করলেন সবাই।
হঠাৎ একটি মেয়ে লাফিয়ে উঠে বলবে এই বাবিদা ব্যাডমিন্টন খেলব। বাবি নামের প্রাণীটি সব কাজ ফেলে ছুট লাগায় গোটা দুই রাকেট আর কক জোগাড় করতে। বেশ পেয়েও যায়। গলা নিচু করে সবচেয়ে স্বাস্থ্যবতী মেয়েটিকে বলে, “দেখলে কেমন চট করে এনে দিলাম। সিনেমা দেখতে যাবে? একটা ভাল আঁতেল সিনেমা এসেছে।”
মেয়েটা হেসে উড়িয়ে দেয়। বাবি মরিয়া হয়ে বলে আমি কাফকাও জানি। মেয়েটি রাজি হয়ে যায়। দুজনে আলাদা হয়ে কেটে পড়ে। তাড়াতাড়ি না গেলে কর্নার সিট্ পাওয়া যাবে না। বাকি পড়ে রইল তিনটে মেয়ে আর গাদাগুচ্ছের হরমোন-অতিক্ষরণ হওয়া ছেলে। মেয়ে তিনটির মধ্যে একজন আবার কলা কামড়ে খায়। তাকে ছেড়ে বাকি দুজনকে লাইন মারতে লাগলেন আপনারা। সেই মেয়েদুটিও মহা ন্যাকা।
খানিক চীনাবাদাম চিবানোর পর ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হল। মেয়েদুটি খেলতে লাগল দুই টিমে। তাদের সাথে পালা করে পার্টনার হচ্ছে ছেলেরা। আপনি মিস করলে যারা শুয়োরের বাচ্চা বলে গাল দিত, সেই তারাই সহজতম শট মেয়েরা নেটে মারার পর বিগলিত হয়ে বলছে,“এমনটা তো হতেই পারে, এস আমি শিখিয়ে দিচ্ছি”। ছোটবেলা থেকেই আপনার কপাল হনুমানের কুৎসিত পশ্চাদ্দেশের ন্যায়। এক্ষেত্রেও খেলায় আপনার চান্স আসার আগেই বাকিরা নিজের সেটিং করে নিল। আপনি ও আপনার আরেক অভাগা বন্ধু কলা চিবানো বয়কাটের সঙ্গে ঘাস চিবাতে চিবাতে খেলা দেখতে থাকেন।
অভাগা বন্ধু বলে, “ভাই মেয়েটাকে দেখ কী সেক্সি!” আপনি তাকিয়ে দেখবেন খেলার হুটোপাটির মধ্যে গোলাপি জ্যাকেট পরা মেয়েটির জামা সামান্য উঠে গিয়ে কোমর দেখা যাচ্ছে আর তাতেই বন্ধুবরের ইমানদন্ড উত্থিত হয়েছে।
কিন্তু আপনি যেহেতু ভদ্র বাড়ির ছেলে এবং ছোটবেলা থেকে মেয়েদের বাজে নজরে না দেখার শিক্ষা পেয়েছেন, তাই আপনি ওসব কুদৃশ্যের দিকে সোজাসুজি তাকান না। আড়চোখে দেখেন কেবলমাত্র। তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় মেয়েটির পাছাটা যে সেক্সি তা অতি বড় সাধুও মানবে। তাই আপনিও বন্ধুর কাছে সেটুকু স্বীকার করলেন। দুজনে মিলে গোটা সময় ম্যাচ যতটা দেখলেন, তার চেয়ে বেশি দেখলেন পাছার দুলুনি। মেয়েটিকে যে আরো স্বল্প থেকে স্বল্পতর পোশাকে কল্পনা করেননি, তা বুক ঠুকে বলতে পারবেন না। তবে কল্পনায় পুরোটা খোলেননি। রাতের জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখতে হবে তো!
হাজার দশেক চান্স দেওয়ার পরেও ন্যাকা মেয়েটি হেরে যায় আর রাকেট মাটিতে ফেলে মুখচোখ কুঁচকে কাঁদার অদ্ভুত খারাপ অভিনয় শুরু করে। সেই দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আপনিসহ সমস্ত উপস্থিত পুরুষ সম্প্রদায়। তাকে থামাতে থামাতে সন্ধ্যে হয় গেছেন। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে এই মহাজাগতিক ঢ্যামনামি শেষ হওয়ার সময় হল ভেবে । কিন্তু মুখে কেউ মানবে না যে নিজের ব্যবসায়িক চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দুই ঘন্টা এসব ধ্যাষ্টামো করে কাটিয়েছে। তাই সবাই দাঁত কেলিয়ে বলবে, “আহা ফাটাফাটি একটা সময় কাটালাম” কিংবা “নেক্সট প্ল্যানটা হোক জলদি”।
শেষ পাতে পানের মতো দুই একবার হর্নি ছেলেপিলে চেষ্টা করবে রমণীদের অন্তত দুই এক পিসের ফোন নম্বর পেতে। হয়তো পেয়েও যাবেন। পেয়ে সে কী আনন্দ আপনার!
রাতে বাড়ি ফিরে মধ্যবিত্ত ডিনার। মুড ভাল না থাকলে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন ভাল কিছু না হওয়ার দরুন। কেউ না কেউ মাইনের অংকটা মনে করিয়ে দিয়ে জোঁকের মুখে নুন ফেলে। রাতে বাথরুম শেষে নিজের প্যান্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে হাতটা গরম করে নেন বেশ। যন্ত্রপাতিও সেট করে নেওয়া হয়। হাত বের করে বেশ একটু শুঁকে নেওয়া হয়। আহ কী গন্ধ! যেন বেলজুঁই এসব শুঁকছেন। তারপর খাটে ঝাঁপ মেরে বৌকে হালকা করে বলবেন, “আজ ব্যাপক লাগছে কিন্তু তোমায়।” ঠিকভাবে তীরখানা চালাতে পারলে শিওর লক্ষ্যভেদ। নাহলেও নো পরোয়া। মোটা পাশবালিশ আর সেই বিকালের গোলাপি জ্যাকেট বৃহদনিতম্বীর টাটকা স্মৃতি তো আছেই।
এই রোজনামচা ঠিক করে লিখলে পুলিৎজার থেকে ঠেকায় কে? তাতে কোন আঁতেল আপনার লেখাকে নারীবিদ্বেষী আনটাচিং হনুমান বলল একদম পাত্তা দেবেন না।
মাঝেমধ্যে সেক্স করবেন; লেখার কন্টেন্ট একদম চুঁইয়ে পড়বে। কতরকম পোজ-পজিশনে কার সঙ্গে কতবার করলেন তার রগরগে বর্ণনাতেই রোজনামচার সাত পাতা হয়ে যাবে। সিঙ্গেল হলে অবশ্য হাতই ভরসা। তবে বেশিদিন হাত দিয়ে কাজ চালালে কিন্তু মেশিন বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। এমনিই দড়কচা মেরে গেছে। তার ওপর বেশি অত্যাচার করলে কোনদিন সকালে দেখবেন খসে পড়ে গেছে।
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9636459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।