রায়গঞ্জ

মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধদের সংখ্যা বাড়ছে রায়গঞ্জে

কিছুদিন আগে পর্যন্ত অঙ্গ ও দেহদান নিয়ে সচেতনতার অভাব ছিল এই শহরে। সমাজকর্মীদের বক্তব্য, বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত। তবে বিগত কয়েক বছরে চিত্রটা পাল্টেছে অনেকটাই। সাধারণ মানুষ এখন নিজেরাই যোগাযোগ করছেন এবং মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছেন।

Bengal Live রায়গঞ্জঃ সোমবার নিজের জন্মদিনে মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ বর্ষে পাঠরত এক কিশোর। “মৃত্যুর পর পুড়িয়ে দিলে তো সব শেষ। তার বদলে আমার অঙ্গ যদি অন্য কোনও মানুষকে বাঁচাতে পারে তবে অন্যের শরীরে আমিও বেঁচে থাকবো।” মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার পর সোমবার এমনটাই জানিয়েছিলেন বাপি সরকার। রায়গঞ্জের পূর্ব কলেজপাড়ার বাসিন্দা বাপির দাবী, তাঁর বাবা, মা-ও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

এই ভাবেই ক্রমশ কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানের প্রতি সচেতনতা প্রকাশ করছে রায়গঞ্জবাসী। তথ্য বলছে, ২০১৬ সাল থেকে রায়গঞ্জে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে চলেছেন কতিপয় সমাজকর্মী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম চন্দ্র নারায়ণ সাহা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে ৭ জন শহরবাসী এই অঙ্গীকার করেছিলেন।ধীরে ধীরে এই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩তে।

চন্দ্র নারায়ণ বাবু জানান, ২০১৬ সালের পর এক ধাক্কায় ২০১৭ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছিল ২৬। এরপর ২০১৮ সালে ১৯। এবং চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ১১জন মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। চন্দ্র নারায়ণ বাবুর দাবী, মঙ্গলবার বিশ্ব অঙ্গদান দিবসকে সামনে রেখে এদিনও দুইজন স্বেচ্ছায় এই অঙ্গীকার করতে চলেছেন। ৬৩ জন অঙ্গীকারবদ্ধ দাতার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকলেও পিছিয়ে নেই মহিলারা। ২৭ জন মহিলা এই অঙ্গীকার পত্রে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছেন চন্দ্র নারায়ণ সাহা।

২০০৯ সালে মায়ের মৃত্যুর পর কর্ণিয়া ও দেহদান করে নজির গড়েছিলেন চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য। অঙ্গ ও দেহদানের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “২০০৯ সালে রায়গঞ্জে প্রথম অঙ্গ ও দেহদান শুরু হয়েছিল। আমার মা করুনাময়ী ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর দেহ দান করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। এবং চোখ দান করা হয়েছিল রায়গঞ্জ আই ব্যাঙ্কে। এই ঘটনা রায়গঞ্জে একটি আলোড়ন তৈরি করে। এরপর বহু মানুষ মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদানে আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করেন। কুসংস্কার এখন অনেকাংশে কেটে গিয়েছে, জনসচেতনতায় সাড়া দিচ্ছে মানুষ।”

জয়ন্ত বাবু এদিন আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, এই মুহূর্তে রায়গঞ্জে কোনও আই ব্যাঙ্ক নেই। ফলে কর্ণিয়া নিয়েও রাখা যাবে না। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ যদি উৎসাহ প্রকাশ করে তবে এখানেই নতুন করে চোখদান করার প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। সরকার চাইলে দেহদানের সুযোগও এখানে রাখা যেতে পারে। তবেই এই শহরে দেহদান সার্থক চেহারা লাভ করবে।

Related News

Back to top button