আসন দাবি করেও উত্তর দিনাজপুরে জোটের স্বার্থে নরমপন্থী কংগ্রেস
বাম-কংগ্রেস জোটের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। যদিও তা এখনও ঘোষণা হয়নি। ঘোষণার পরেই বোঝা যাবে, জোটের জল কোনদিকে গড়ায় ?
Bengal Live রায়গঞ্জঃ বাম – কংগ্রেস জোটে জট উত্তর দিনাজপুরে। ইটাহার বিধানসভা আসনে লড়াই করার দাবি জানিয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস। সংগঠন মজবুত হয়েছে, তাই দাবি জানানো হয়েছে বলে দাবি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের। পালটা, জোটের নিয়ম না মানলে জেলার সব আসনে প্রার্থী দেবে বামেরা বলে জানানো হয়েছে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
২০১১ সালের আগে পর্যন্ত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তিন তিনবার বিধায়ক এমনকি রাজ্যের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না হলেও এবারেও যে বামেরা শ্রীকুমার মুখার্জীকেই প্রার্থী করবে তা এক প্রকার নিশ্চিত। ফলে সবদিক থেকেই প্রস্তুত রয়েছেন বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই প্রার্থী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। তদুপরি জেলা কংগ্রেস থেকে ইটাহার আসন দাবি করায় জোটে জট লেগেছে। যদিও বাম-কংগ্রেস জোট নেতৃত্ব জানিয়েছে, নীচুতলার নেতা কর্মীরা দাবি করতেই পারেন। তবে জোটের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট যাকেই প্রার্থী করবে তার হয়েই প্রচার করবে দুই দল।
একটা সময় ছিল উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রটি ছিল কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা জয়নাল আবেদিনের দখলে। জয়নাল আবেদিন জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন। এরপর সিপিআই নেতা অধ্যাপক ডঃ শ্রীকুমার মুখার্জি কংগ্রেসের সেই গড় দখল করে বিধায়ক হন। প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি। মূলত সিপিআইএম-এর সংগঠনের উপর ভর করেই ইটাহার বিধানসভা দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্টের দখলে থাকে। মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখার্জির আগেও এই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই থেকে বসন্তলাল চ্যাটার্জি এবং স্বদেশ চাকি বিধায়ক হয়েছিলেন।
রায়গঞ্জে বনধের সমর্থনে একসাথে পথে নামলো না বাম-কংগ্রেস, ভোটের মুখে জোটে জল ?
কিন্তু বামফ্রন্টের এই দূর্গ ভেঙে যায় ২০১১ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঝড়ে। এরপর ধীরে ধীরে ইটাহারে সিপিআই, সিপিএম তথা বামফন্টের শক্তি একেবারের তলানিতে নেমে আসে। অপরদিকে কংগ্রেস আবার তাদের সংগঠন ধীরে ধীরে বাড়াতে শুরু করেছে। এদিকে ২০১৬ সালের পর ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস নির্বাচনী জোট বেঁধে ২৯৪ টি আসনে লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব আসনেই তাদের মধ্যে জোট চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।
উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। সেই হিসেবে আমরা দাবি করেছি। তবে রাজ্য বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাকেই চূড়ান্ত বলে আমরা মেনে নেব। এব্যাপারে ইটাহারের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ডঃ শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, নীচুতলার নেতা কর্মীদের এই দাবি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। তাঁর অভিযোগ, অনেকেই ভেবেছেন যদি কোনওরকমে একবার টিকিট পেয়ে বিধায়ক হওয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অন্য দলে বিক্রি হয়ে যাবেন। তবে সাধারণ মানুষের উপর ও বাম-কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখলে এবার বাম-কংগ্রেস জোটের ফল নিশ্চয়ই ভালো হবে।
উত্তর দিনাজপুর জেলা বামফন্টের আহ্বায়ক অপুর্ব পাল জানিয়েছেন, নীচুতলার নেতাকর্মীরা কে কী দাবি করল তা ভাবনার বিষয় নয়। এবার তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্ত করতে বাম-কংগ্রেস জোটের উপর আমাদের ভরসা করে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হবে। আসন বন্টনের বিষয়টি বাম-কংগ্রেস জোটের শীর্ষ নেতৃত্বই ঠিক করবে। তবে কংগ্রেস জোটের নিয়ম না মানলে জেলার সবকটি আসনেই প্রার্থী দেবে বামেরা।