রায়গঞ্জ

বাড়ি জুড়ে ভিন্টেজ ফাউন্টেন পেন, ঝরনা কলম সংগ্রহ করাই শখ রায়গঞ্জের শিক্ষকের

ফাউন্টেন পেনের প্রতি তাঁর নস্টালজিয়া দীর্ঘদিনের। সেই ভালবাসা থেকে সংগ্রহ করেছেন একের পর এক ভিন্টেজ ফাউন্টেন পেন। বর্তমানে প্রায় একশ পেন রয়েছে রায়গঞ্জের শিক্ষক কৌস্তভ পালের সংগ্রহে।

Bengal Live রায়গঞ্জঃ বল পয়েন্ট পেনের একচ্ছত্র জামানাতেও ফাউন্টেন পেনের প্রতি তাঁর আবেগ কমেনি এতটুকুও। লেখালেখি করার সময় শেষ কবে বল পয়েন্ট পেনের ব্যবহার করেছেন তাও খেয়াল নেই তাঁর। কথায় আছে, নতুন প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যায়, হারিয়ে যায় পুরনোরা। কিন্তু রায়গঞ্জের বীরনগরের বাসিন্দা জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষকের বাড়িতে যেন উলটো চিত্র৷ ‘ঝরনা কলম’ অথবা ফাউন্টেন পেন নিয়ে এখনও অতীতচারি রামপুর ইন্দিরা উচ্চ বিদ্যাপীঠ স্কুলের শিক্ষক কৌস্তভ পাল৷ ফাউন্টেন পেন তাঁর কাছে ভালোবাসা ও উত্তরাধিকারের প্রতীক। গড়ে তুলেছেন দুষ্প্রাপ্য ঝরনা কলমের সংগ্রহশালা।

কী কী কলম রয়েছে শিক্ষকের সংগ্রহে?

কৌস্তুভ বাবু জানান, ভারত, জাপান, কানাডা, চীন, জার্মানি, তুর্কি, তাইওয়ান-ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি পার্কার, সেলর, পাইলট, ওয়াটারম্যান, প্ল্যাটিনাম, পেলিক্যান, প্ল্যাটিগন্যাম, স্ক্রীস, উইঙ্গসাং, হিরো, ল্যামি, লোটাস, এয়ারমেল, মিয়াওয়ার্ডি সহ বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা প্রস্তুত প্রায় ১০০ রকমের ফাউন্টেন পেন রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। সংগৃহীত পেনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কৌস্তভ বাবু জানান, ‘পার্কার ৫১’ মডেলের পেনটি পৃথিবীর সফলতম ফাউন্টেন পেন। ‘পার্কার ৭৫’ মডেলের পেনটি দিয়ে ভিয়েতনাম ওয়ার শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ‘প্ল্যাটিগনাম’ পেনটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়িতে ব্যবহার হত। তাঁর কটকের বাড়ির মিউজিয়ামে গেলে সেই তথ্য জানা যায়।

‘এভারসার্প’ কোম্পানির পেন দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখালেখি করতেন। এইসবই রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।

তবে শুধু ফাউন্টেন পেনই কেন? কেনই বা এই সংগ্রহের দিকে আগ্রহ বাড়ল তাঁর? উত্তরে কৌস্তভ বাবু বলেন, “বায়োলজি পড়ার সময় মাইক্রোস্কোপ ও বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের বিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারি। সাথে মানুষেরও নানান দিক থেকে পরিবর্তন ঘটার কথাও। যেমন মানুষের আঙুলের গঠন ও আঙুলের ব্যবহার নিয়েও পরিবর্তন ঘটেছে। আঙুলের ব্যবহারই সাংস্কৃতিক বিবর্তনের অন্যতম কারণ।”

তিনি বলেন, “পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা যন্ত্রের দরকার ছিল। সেই যন্ত্রের উদ্ভাবনায় একটা বিজ্ঞানের প্রয়োজন ছিল। ফাউন্টেন পেন তারই ফলস্রুতি। পেটেন্টের ইতিহাসে ফ্রান্স, আমেরিকার হাত ধরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে ফাউন্টেন পেন। ক্রস ওয়াটারম্যান, পার্কার, শেফার্স– এগুলোর সাথে সাথে বিভিন্ন জাপানিজ, চাইনিজ, ইটালিয়ান ও জার্মান পেনগুলো মানুষকে লেখার নিশ্চিন্তি দেয়। পরবর্তীতে এই পেনগুলো যখন মার্ক টোয়েন, গান্ধীজি, সুভাষ বোসদের হাতে ব্যবহার হতে দেখি কিংবা বাড়ির পুরোনো ছবিতে বাবা, ঠাকুরদার পকেটে ব্যবহার হতে দেখি, তখন স্বভাবতই যন্ত্রটার প্রতি আকর্ষণ জন্মায়।”

তিনি আরও বলেন, “ফাউন্টেন পেনের মধ্যে গ্র‍্যাভিটি, ক্যাপিলারিটি, এয়ার প্রেসার, ইরিডিয়াম টিপ, বিভিন্ন ধরণের মেটাল নিব আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া, ফাউন্টেন পেন ব্যবহারকারীর হাতের কম্পাঙ্কের সাথে অভিযোজিত হয়ে পড়ে। যা ভীষণভাবে ব্যক্তিগত করে তোলে যন্ত্রটিকে। এই ডিজিটাল টেকনোলজির যুগে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ লেখকের নির্ভরতা ফাউন্টেন পেনেই। এই পেন লেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করে ও হাতের লেখার স্বতঃস্ফূর্ত নিরবিচ্ছিন্নতাকে রক্ষা করে। এসব কারণের পাশাপাশি ফাউন্টেন পেনের প্রতি ভালোবাসাটা আমার বাবা শিক্ষক অরুণ কুমার পালের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেও পাওয়া।”

Related News

Back to top button