রাজ্য

প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়

প্রয়াত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দিল্লির সেনা হাসপাতালে সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর ট্যুইট করে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে প্রাক্তন সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫।

Bengal Live প্রতীক সান্যাল, রায়গঞ্জঃ শেষ হল ভারতীয় রাজনীতির এক অধ্যায়। টানা ২২দিন ধরে দিল্লির সেনা হাসপাতালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন জাতীয় রাজনীতির এই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’। সোমবার সন্ধ্যা পৌঁনে ছটা নাগাদ পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধায় ট্যুইট বার্তায় জানান, বাবার বিদায়ের কথা। বাংলার ‘ভারত রত্ন’র প্রয়ানে শোকস্তব্ধ সারা দেশ। শোকার্ত বিরোধী দলের মহারথীরাও।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫-এর ১১ ডিসেম্বর, বর্তমান বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের মিরাটি গ্রামে। পিতা কামদাকিঙ্কর ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দীর্ঘ ১৯২০ থেকে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে তিনি দশ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন। পরে কামদাকিঙ্কর অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য (১৯৫২-৬৪) হন। তিনি বীরভূম জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদও অলংকৃত করেন। পিতার প্রভাব হোক বা কংগ্রেসি পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফল, ছোট থেকেই তাঁর মধ্যে মুক্ত চিন্তা এবং আধুনিক মননের প্রভাব ছিল। আর তার সঙ্গেই জুড়ে গিয়েছিল সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে নতুন দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন।

সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে ভর্তি হলেন আইন নিয়ে। এর পরেই রাজনীতির মঞ্চে আত্মপ্রকাশ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেকনজরে আসেন তিনি। আর এই সম্পর্ক স্থায়ী হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যু পর্যন্ত। যদিও প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন কলেজশিক্ষক রূপে তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি সাংবাদিকের কাজও করেন কিছুকাল। লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভাতেও কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

এত অল্প সময়ের মধ্যে রাজনীতির জগতে এমন উচ্চ শিখরে ওঠা এদেশের খুব কম মানুষের জীবনেই সম্ভব হয়েছে। তবে ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধি তাঁকে ক্রমশ কোণঠাসা করতে চাইলেও ততদিনে তিনি জাতীয় কংগ্রেস দলের একজন মহীরুহ হয়ে উঠেছেন। নানা সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক এবং অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিশেষ করে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে একেবারে ভেঙে পড়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

তাঁর রাজনীতির জীবনে অপেক্ষা করছিল আরও এক পালাবদল। দেশের নানা প্রান্তের নানা দলে বিভক্ত মানুষ একসঙ্গে রাষ্ট্রপতির আসনে দেখতে চাইলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই। ২০১২ সালে প্রথম কোনও বাঙালি রাষ্ট্রপতি পদে বসলেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও সমস্ত ব্যস্ততা কাটিয়ে প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় বাড়িতে এসেছেন, নিজের হাতে পুজো করেছেন। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হতেই সক্রিয় রাজনীতির ময়দান থেকে তাঁর প্রস্থান ঘটে। তাঁর পার্থিব শরীর পঞ্চভূতে বিলীন হলেও দেশের শাসন ও রাজনীতিতে তাঁর অবদান বাঙালির পাশাপাশি মনে রাখবে গোটা ভারতবর্ষ।

Back to top button