রাজ্য

অভাবের তাড়না, বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার মিঠুন এখন রঙের মিস্ত্রি

বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার মিঠুনের প্রতিভা থমকে গেছে জেলা স্তরেই, পেটের টানে ব্যাট বল ছেড়ে হাতে তুলে নিতে হয়েছে রঙের কাজের সরঞ্জাম।

Bengal Live বালুরঘাটঃ  বছর পনেরো আগেও দক্ষিণ দিনাজপুর ক্রীড়া জগতের পরিচিত নাম ছিল সনজিৎ মন্ডল ওরফে মিঠুন। একসময় বালুরঘাটের সাত নম্বর ওয়ার্ডের দিশারী পাড়া এলাকার বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার সনজিৎ ছিলেন জেলাস্তরের ব্যাটসম্যানদের ত্রাস। দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনে তিনি টাউন ক্লাব, ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, যাত্রিক, ত্রিধারা ইত্যাদি নানা ক্লাবের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেইসময় তাঁকে খেলানোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যেত বালুরঘাটের ক্লাবগুলোতে। যেকোন দলের হয়ে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বোলিং করতেন তিনি। এমনকি জেলা একাদশের হয়েও বিভিন্ন এলাকায় খেলতে গিয়েছেন মিঠুন।

স্বাধীনতা দিবসের আগে প্রাক্তন সেনা আধিকারিককে সুস্থ করে ঘরে ফেরালেন রায়গঞ্জের বাপি বিশ্বাস

আর শুধু ক্রিকেটই নয়, টেনিস টুর্নামেন্টেও তিনি ছিলেন দক্ষ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে টেনিস খেলতেও ডাক পড়তো মিঠুনের। কিন্তু খেলা অন্তপ্রাণ মিঠুনের প্রতিভা থমকে গেছিলো জেলা স্তরেই, তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর জেলা স্তরেই খেলে গিয়েছেন। অপরিসীম দক্ষতা নিয়েও সুযোগ মেলেনি রাজ্য স্তরে খেলতে যাওয়ার, মেলেনি তেমন কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও।

ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সংসার চালাতে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে ইতি টেনে রং মিস্ত্রির কাজকে বেছে নিয়েছেন ৪৮ বছরের মিঠুন। তবে সেখানেও সেভাবে সফলতা আসেনি প্রাক্তন খেলোয়াড় মিঠুনের। সারা মাসে হাতেগোনা যে কয়েকটি কাজ মেলে তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। কয়েক বছর আগে আর্থিক অনটনের কারণে তাঁকে ছেড়ে গিয়েছে স্ত্রীও।

বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা, জলবন্দি শতাধিক পরিবার

পেটের দায়ে তাঁর বড় ছেলে কুনালও বছর কয়েক আগেই রং মিস্ত্রির কাজ শুরু করেছে। আর ছোট ছেলে কুশল সম্প্রতি পড়াশোনা ছেড়ে কাজ নিয়েছে একটি চানাচুরের ফ্যাক্টরিতে। নিজে একসময়ের পরিচিত খেলোয়াড় হয়েও ছেলেদের ক্রিকেট মাঠে যেতে দেননি বাবা। আক্ষেপের সুরে মিঠুন বলেন, “নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছি, খেলে কিছু হয় না। আগে তো তাও নানা টুর্নামেন্ট হত, খেলার অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। খেলার মান অত্যন্ত নেমে গিয়েছে, খেলোয়াড়দেরও কোনো সম্মান নেই। শেষপর্যন্ত পেট চালাতে খেটেই খেতে হবে, তাই ছেলেদের খেলার মাঠে যেতে দিইনি।”

Left-arm fast bowler Mithun is now a colorist

নিজের খেলোয়াড় জীবনের বিভিন্ন সময়ে মিঠুন পেয়েছিলেন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ, ম্যান অব দ্যা সিরিজ সহ বিভিন্ন ট্রফি। তাঁর সংগ্রহে এমন প্রায় ২৫০ টি ট্রফি রয়েছে । এখন সেগুলো পড়ে থাকে বস্তাবন্দি অবস্থায় খাটের তলায়। মিঠুন বলেন, “একসময় অভাবের তাড়নায় ওই ট্রফিগুলিকে বেচে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। তবে পরিস্থিতি যা, সেগুলো আর কতদিন আগলে রাখতে পারব তা জানি না। যখন খেলতাম তখন সকলেই প্রতিশ্রুতি দিত, কিন্তু পরে কেউ একটা কাজও জুটিয়ে দেয়নি, কেউ পাত্তাই দেয়না। তাই মন না চাইলেও এই রঙ মিস্ত্রির কাজ করতে হয়।”

ছকে বাঁধা জীবনে বানিয়ে ফেলুন যোগ ব্যায়ামের রুটিন। জেনে নিন কোনটা কখন করবেন আর কোনটা করবেন না

খেলোয়াড় ফোরামের প্রাক্তন সভাপতি বিদ্যুত দাম এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “আমাদের মত প্রান্তিক জেলাগুলোতে খেলোয়াড়দের নিয়ে ভাবনাচিন্তা খুব কমই হয়। অন্যান্য অনেক জেলাতে স্পোর্টস কোটায় খেলোয়াড়রা চাকরিতে নানা সুযোগ পান, আমাদের জেলায় কোনোদিনই সেসব হয়না। মিঠুন মন্ডল সত্যিই খুবই কষ্টে রয়েছে। আমরা ফোরামের তরফ থেকে তার সাথে যোগা্যোগ রেখেছি। জেলার প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সহায়তায় প্রশাসন এগিয়ে এলে ভালো হয়।”

Back to top button