রক্তাক্ত উত্তর দিনাজপুরের পঞ্চায়েত নির্বাচন, মৃত দুই, আহত একাধিক

দিনভর অভিযোগ, রক্তাক্ত উত্তর দিনাজপুরের পঞ্চায়েত ভোট।

 

Bengal Live রায়গঞ্জ: শনিবার সকালে নির্বাচন শুরু হতেই উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে নানান অভিযোগে সরব হয় রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, নয়ানজুলিতে ব্যালট বাক্স ফেলে দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগ করা হয় বাম, কংগ্রেস বিজেপির পক্ষ থেকে। নির্বাচন শুরু হওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার নিদর্শনও দেখা যায় ইসলামপুরের ভাটপোখর ৭৮ নম্বর বুথে। বিরোধীদের অভিযোগ ভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকেই বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা দেওয়া শুরু হয় ওই বুথে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামপুরের তৃণমূল নেতা জাকির হুসেন।

এদিকে বেলা বাড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া৷ কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় দুইজনের। সংঘর্ষে চাকুলিয়া ব্লকের বিদ্যানন্দপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেবরা গ্রামের ১৯২ নং বুথের তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ শাহেনসার মৃত্যু হয়৷ অভিযোগ মহম্মদ শাহেনসার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয়। এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয় বলে জানা গেছে।

গোয়ালপোখর ১ ব্লকের সাহাপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জাগিরবস্তি বুথে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় কংগ্রেস কর্মী শেখ জমিরুদ্দিনের। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বুথ দখল করতে এলে বাধা দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় জমিরুদ্দিনের বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

এদিকে হেমতাবাদের গিয়াশীলে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত দেহ উদ্ধার হয়। পাটক্ষেতের ধার থেকে মৃত দেহ উদ্ধার হয় নারায়ন দেবশর্মা নামে ওই ব্যক্তির। পরিবারের অভিযোগ ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে।

ইটাহারের বাগবাড়ি ও ইসলামপুরের রামগঞ্জ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বহরণগছ বুথে ব্যালট বাক্স নয়ানজুলিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে৷ দুই ক্ষেত্রেই শাসক বিরোধী একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। রায়গঞ্জের মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভিটি কাটিহারের ৫৭ নম্বর বুথ ছেড়ে পালিয়ে যান ভোট কর্মীরা। নির্দল ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়ে ভোট কর্মীরা বুথ ছেড়ে চলে যান বলে জানা গেছে। প্রায় দুই ঘন্টা নির্বাচন বন্ধ থাকার পর নতুন ভোট কর্মীরা এলে নির্বাচন পুনরায় শুরু হয়৷

এই বিষয়ে রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, গোটা রাজ্য রক্তগঙ্গা বইছে। সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে ভোত করা হচ্ছে। স্ট্রং রুমের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখা হয়নি। ভোটের নাম প্রহশন, লুঠতরাজ চলছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএম সম্পাদক আনয়ারুল হক বলেন, সকাল থেকেই ইসলামপুর, ইটাহার সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট শুরু হয়। আমরা একাধিক অভিযোগ জানিয়েছি কমিশনে। তবে প্রশাসন কোনও কিছুতেই গুরুত্ব দেয়নি। ভোটের নামে প্রহসন চলছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তও এদিন একই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, জেলা জুড়ে ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, বোমাবাজি করেছে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। এদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও দেখা মেলেনি। সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে ভোট করানো হয়েছে। বোমার আঘাতে আমাদের এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, উত্তপ্ত বাংলার পরিস্থিতি তৈরি করেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। যেকোনও মৃত্যুই দু:খের। কেউ যেন মারা না যান, আমরা সেই প্রার্থনাই করেছি।

Exit mobile version