NBlive রায়গঞ্জঃ হাতে মাত্র আর ১২ দিন। তারপরেই শুরু এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট। মুখোমুখি হবে শাসক বিরোধী দলের প্রার্থীরা। তবে ইতিমধ্যেই ভোটের আগে রাজ্যে তিনটি স্তর মিলিয়ে ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে শাসক দল। যা নাকি রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাসে রেকর্ড। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ এই তিনটি স্তরে মোট ৫৮,৬৯২ আসনের মধ্যে ২০,০৭৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। দু-একটি ক্ষেত্র বাদ দিলে বাকি সব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসনে জয়ী তৃণমূলের প্রার্থীরাই। রাজ্যে ১৯৭৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন মোট ২৩,১৮৫ জন প্রার্থী। আর শুধু এ বারই ২০ হাজারের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীরা।
এদিকে উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও ভোটের আগেই ৮৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন, ৮ টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩ টি জেলা পরিষদ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে উত্তর দিনাজপুর জেলায় মনোনয়ন দাখিল করার দিক থেকে বিজেপি শাসক দলকে টেক্কা দিতে না পারলেও বাম ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। জেলা পরিষদের মোট ২৬টি আসনের মধ্যে শাসক দল মনোনয়ন জমা করেছে ২৭টি। এদিকে শাসক দলের থেকে দুটি মনোনয়ন বেশি জমা দিয়েছে বিজেপি। তাঁদের মনোনয়নের সংখ্যা ২৯। ২৬ আসনে ২৯জন বিজেপির প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার ঘটনায় বিজেপির অন্তঃদ্বর্ন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। জেলা পরিষদে সিপিআইএম মনোনয়ন জমা দিয়েছে ১৫টি। কংগ্রেস দিয়েছে ২০টি।
তবে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির হিসেবে বিজেপি তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে থাকলেও বাম ও কংগ্রেস থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ২৮৭টি আসনে বিজেপি মনোনয়ন জমা দিয়েছে ২৬৭ টি। এইক্ষেত্রে কংগ্রেস ও সিপিআইএম দিয়েছে যথাক্রমে ১৪৩টি ও ১৬৭টি। তবে এই তালিকায় সব থেকে উর্দ্ধে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্ধারিত আসনের থেকে ৮০ টি মনোনয়ন বেশি জমা দিয়েছে তারা। ফলে অতিরিক্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীরা দলীয় সিম্বল না পেলেও তাঁরা যে গোঁজ হয়ে দলেরই কাঁটা হয়ে থাকবে সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও বাম কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও গোঁজ সমস্যায় জর্জরিত শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মোট ১৬৪৯ আসনে ১৮২৫টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে শাসকদল। নির্ধারিত আসনের থেকে ১৭৬টি আসনে বেশি প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এই তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে বিজেপি। তাঁরা জমা দিয়েছে ১২০৪টি মনোনয়ন। ৬৭৬ টি মনোনয়ন জমা দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিপিআইএম। এবং ৫৮৭টি মনোনয়ন জমা দিয়ে চতুর্থ কংগ্রেস।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর রাজ্য শাসক দলের ৯৬% গোঁজ প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছে। রাজ্যের ৮২৫টি জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের তরফে মনোনয়ন জমা পড়েছিল এক হাজার। পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৯,২১৭ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের তরফে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ১২,৫৯০টি। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৪৮,৬৫০টি আসনের মধ্যে শাসক দলের তরফে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ৫৮,৯৭৮ জনের। তিন স্তর মিলিয়ে ১৩ হাজারেরও বেশি গোঁজ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছিল রাজ্য। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৯৬ শতাংশ গোঁজ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে তাঁদের মনোনয়ন। তবে উত্তর দিনাজপুর জেলায় তিনটি স্তর মিলিয়ে শাসক দলের মোট এখনও গোঁজ প্রার্থীর সংখ্যা ২৫৭। যা নাকি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় নেতৃত্বের কাছে।
