বাঁশি আর সেই সুরে বাজে না, উত্তর বাংলার শিল্পীর চোখে জল

একসময় তাঁর বাঁশির সুর ভেসে বেড়াত পাহাড়ের গায়ে গায়ে। এখন সেই বাঁশিতে জমছে ধুলো। বিকল বৃক্ক নিয়ে শয্যাশায়ী শিল্পী। কে সেই শিল্পী, জানেন কি ?

Bengal Live কোচবিহারঃ চার বছর হল, বাঁশিতে ফু দেন না নকুল বর্মন। ধুলো জমেছে বাঁশির গায়ে। অথচ তাঁরই বাঁশির সুরে একসময় মুগ্ধ হয়েছেন উত্তর বাংলার মানুষ। পাহাড়ের গায়ে গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে মোহনিয়া সুর। সে সুর তরঙ্গ তুলেছে সমতলেও। অতীত দিনের কথা ভাবলে মন ভারী হয় তাঁর। বিকল কিডনি আর অচল শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে তবু কান পাতেন আকাশে। যদি আবার কখনও ডাক আসে আকাশবাণী বা দূরদর্শন থেকে ! যদি ফের লহরী ওঠে তাঁরই বাঁশির সুরে। শুয়ে শুয়েই মঞ্চ খোঁজে মন।

বাজারে আসছে ১০ কোটি জিও স্মার্টফোন, মিলবে জলের দরে

উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বাঁশি বাদক নকুল বর্মন

উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বাঁশি বাদক নকুল বর্মন । কোচবিহারের দিনহাটা ২নং ব্লকের বড় শাকদল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি ভাঙা বাড়িতে বাস। এখন সেখানেই দিন কাটে ষাটোর্দ্ধ শিল্পীর। গত চার বছর ধরে কিডনির সমস্যায় শয্যাশায়ী। নিজের যা কিছু সঞ্চয়, সব উজার হয়ে গেছে চিকিৎসা ও সপ্তাহে দুইবার ডায়ালিসিস করতেই। ঘরে শুয়ে বাঁশির শব্দ শুনলেই দুচোখ বেয়ে জল আসে। ফের বাঁশি হাতে নিজের ফর্মে ফিরতে চান নকুল।

করোনা আবহে ঘরবন্দী পড়ুয়াদের এবার স্কুলমুখী করার উদ্যোগ নিল সরকার

থেমে গেছে তাঁর বাঁশির সুর

সেই ষাটের দশকের শেষভাগে যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তেন, তখনই রাখাল রাজার মতো হাতে তুলে নিয়েছিলেন বাঁশরি। পরে একের পর এক তালিম নেন খ্যাতনামা বাঁশি বাদক সুশীল কুমার রায়, হরিহর রায় সরকার, বলরাম মুখার্জির মতো গুরুর কাছে। উত্তরবঙ্গ জুড়ে বহু মঞ্চে কখনও একক ভাবে, কখনও খ্যাতনামা গায়কের সঙ্গে বাঁশি বাজিয়ে মন মাতিয়েছেন সকলের। আকাশবাণী শিলিগুড়ির বেতার শিল্পী, প্রসার ভারতীর বহু অনুষ্ঠানে এমনকি জলপাইগুড়ি দূরদর্শন কেন্দ্রেও বাঁশি বাজাতেন নকুল বর্মন। ছাব্বিশ বছর ধরে উত্তর বাংলার মাটির গান ভাওয়াইয়ার সুরে সুর মিলিয়েছে নকুলবাবুর বাঁশি। খ্যাতনাম ভাওয়াইয়া শিল্পী প্রতিমা বড়ুয়ার সঙ্গেও বাঁশি বাজিয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে শংসাপত্র পেয়েছেন তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত থেকে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী হাফিজুর রহমান, রথীন রায়, ভূপতি ভূষণ বর্মা, জিনিয়া খান মালা, নাদিরা বেগমের মতো শিল্পীর সাথেও বহু অনুষ্ঠান করেছেন।

শিলিগুড়িতে হেলে পড়ল বাড়ি, উত্তরবঙ্গের একগুচ্ছ খবর নিয়ে নজরে জেলা

শুয়ে শুয়েই মঞ্চ খোঁজে মন

কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে থেমে গেছে তাঁর বাঁশির সুর। একসময়ের খ্যাতনামা এই শিল্পী এখন বিছানায় শয্যাশায়ী। আর্থিক সঙ্কটে পারছেন না উন্নত চিকিৎসা করাতে। তাই বাড়িতেই পড়ে রয়েছেন অসহায় ভাবে। পুরনো স্মৃতি বুকে আগলে বিছানায় শুয়ে শুধু আকাশ দেখেন দিনহাটার বাঁশিওয়ালা।

ভাওয়াইয়ার সুরে সুর মিলিয়েছে নকুলবাবুর বাঁশি
Exit mobile version