বেঙ্গল লাইভ Special

স্মরণে শঙ্খ ঘোষ, রেখে গেলেন কালজয়ী সৃষ্টি সম্ভার

সাহিত্যের আঙিনায় নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হলেন কবি-সমালোচক শঙ্খ ঘোষ। করোনা আক্রান্ত হয়ে বুধবার নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন কবি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

Bengal Live ডেস্কঃ  বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্বতন্ত্র ভাবনা ও ধারাভাষ্যের প্রবর্তক হলেন শঙ্খ ঘোষ। রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে যাঁরা সাম্প্রতিক সামাজিক ঘটনাস্রোতকে স্বপ্রতিভ ভঙ্গিমায় লেখনীতে কলমের আঁচড়ে খাঁড়া করেছেন, তাঁদের অন্যতম আধুনিক কবি শঙ্খ ঘোষ। সমাজের অনৈতিক কার্যকলাপ, দ্বেষ, টানাপোড়েন কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক, শ্লেষাত্মক, হাস্যরসের অদ্ভুত মেলবন্ধন ফুটে ওঠে কবির কবিতায়।

১৯৩২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতবর্ষে, বাংলার চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। পিতা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ ও মাতা অমলা ঘোষ। বংশ পরম্পরায় শঙ্খ ঘোষের পৈতৃক ভিটে-সম্পত্তি ছিল বাংলাদেশের বরিশালে। কিন্তু পিতা পাবনাতে চাকুরী করায় তাঁর কৈশোর জীবন পাবনাতেই কাটে। সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক হন। এরপর ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। বঙ্গবাসী কলেজ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি। ১৯৯২ সালে কর্মজীবনের শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা থেকে অবসর নেন শঙ্খ ঘোষ। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, কবি ও সাহিত্য সমালোচক।

তাঁর সৃষ্টিতে সমাজের সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের ছাপ যেভাবে স্বমহিম ভঙ্গিতে প্রতিফলিত হয় তা খুব কম জন কবির লেখাতেই প্রতিভাত হয়। শঙ্খ ঘোষের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়। ১৯৫৩ সালে এই প্রত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই তাঁর কবিতা ‘দিনগুলি রাতগুলি’ স্থান পায়। একই শিরোনামে শঙ্খ ঘোষের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। এছাড়াও একাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন শঙ্খ ঘোষ। ‘কুন্তক’ ছদ্মনামে কিশোরদের জন্য একাধিক ছোটগল্প রচনা করেছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে “বাবরের প্রার্থনা” কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কারে পুরস্কৃত হন।১৯৯৯ সালে পান ‘দেশিকোত্তম’। ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সন্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করে। ২০১৬ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সন্মান ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ লাভ করেন শঙ্খ ঘোষ। এছাড়াও দেশ-বিদেশের একাধিক সন্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

কালবেলায় কবির জীবন-দীপ নিভে গেল বটে, কিন্তু তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির মধ্যে অমর হয়ে রইলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button