যদি সব শিক্ষক তেমন হতেন তবে পৃথিবী রসাতলে যেত

তবে সব শিক্ষকই যে সেরকম হন, তেমনটা নয়। সবাই তেমন হলে পৃথিবী এতদিনে রসাতলে যেত। শিক্ষক দিবসে লিখলেন সৌরভ তালুকদার
Bengal Live পোর্টজিনঃ একটা ছোট্ট ঘটনা। ভদ্রলোকের জন্মদিনটা তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা পালন করতে চাইছিলেন। তাকে যখন সে কথা জানানো হল, তিনি বললেন- “আমি বেশি খুশি হব, যদি আমার জন্মদিন আলাদা ভাবে পালন না করে পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষকের উদ্দ্যেশে পালন করা হয়”। এর পর থেকেই সেই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে। হ্যাঁ, ভদ্রলোকটি ছিলেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। আজ সেই দিন। ৫-ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষক দিবস। পৃথিবীর অনান্য কিছু দেশে বছরের অন্য দিনে এই দিনটি পালন করা হয়। সেটা আজ না হয় থাক; আজ আমার চারপাশে থাকা শিক্ষকদের নিয়েই আলোচনা করি।
শিক্ষক আসলে কী বা কে ? খুব সহজ একটা প্রশ্ন। উত্তরটা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন অর্থে ধরা দেয়। আপনি একটা ছোট্ট শিশুকে এ প্রশ্ন করলে সে বলবে- “যাঁরা আমাদের শিক্ষা দেন, তাঁদের আমরা শিক্ষক বলি”। বড়োদের একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তারা বলবেন -“যারা আমাদের শিক্ষা দেন, তাঁদের আমরা শিক্ষক বলি”। কেমন উত্তরটা একই লাগছে না ? উত্তর একই হলেও বয়স ভেদে উত্তরের পেছনের গল্প পালটে যেতে থাকে।
একটা মানুষ অনেকটা স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে পা বাড়ায়। ধুলো পরা অতীতটাকে একবার যদি পালটে নেওয়া যায়, কিংবা এমন কিছু যা রাতে ঘুমোতে দেয় না। সেটা বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। সকলেরই একটা স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন যদি দোতলা হয় তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল একটা সিঁড়ি। আর শিক্ষক হলেন সিঁড়ির কারিগর। কিন্তু সেই সিঁড়িই যদি নড়বড়ে হয় ? তবে !
একটু কান পাতলেই আজকাল শোনা যায়, কিছু শিক্ষক আর পড়িয়ে আনন্দ পান না। তারা দেখে অনন্দ পান, খসখসে দেওয়ালের ওপর বসে থাকা পোকাকে দেখে যেমন টিকটিকি আনন্দ পায়, ঠিক তেমন। কিংবা মাইনের টাকায় তাঁর আর সংসার চলে না। তাই তিনি স্কুলের চাল-ডাল কিংবা জাল সই করে, অন্যের টাকা চুরি করে খেতে মজা পান! কিংবা মোটা টাকার বিনিময়ে নোট বেঁচতে মজা পান! বিদ্যাসাগর মশাই শিখিয়েছিলেন, “সদা সত্য কথা বলিবে”। চলুন এমনই কিছু সত্য কথা বলা যাক…
২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। এক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সই করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল। অভিভাবকদের মতে, তিনি শিক্ষা কমিটির সই নকল করে বিভিন্ন পরিবারের টাকা আত্মসাৎ করছিলেন বহুদিন ধরেই। যখন অভিভাবকরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে শুরু করেন, তখন তিনি সেই অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করেন।
জুলাই, ২০১৯। ৫২ বছরের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠলো ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ।
অক্টোবর, ২০১৮। ৩০ বছরের এক শিক্ষক দ্বারা ১৬ বছরের এক মেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার।
জানুয়ারি ২০১৯। শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
সবটা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। যাঁরা মানুষ তৈরির কারিগর তাঁরাই কিনা বিভিন্ন সময়ে ধ্বংসের কারিগর হয়ে উঠছেন। এখন বড়ো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে প্রায় অনেক ছাত্রীর মুখে শোনা যায়, তাদের স্যার তাদের দিকে অদ্ভুত এক নজরে তাকান। তাঁদের ভয় করে কিন্তু কী করবে ? কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তো আর চলে যেতে পারে না। মা বাবা কত স্বপ্ন মনে নিয়ে পাঠিয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষক জাল পাতেন। যারা সেই জালে পা দেয় তাদের সমস্তটা এক বিন্দুতে নিভে যায় কিংবা অনেকে মানিয়ে নেয়। অনেকে ভাগ্যের দোষ দেয়, অনেকে আবার চিৎকার করতে চায়।
আজ শিক্ষক দিবস। আজ সেই শিক্ষকরাও স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের উপহার দেবে, তারা আশীর্বাদ করবেন। আবার কাল থেকে কিংবা আজই সুযোগ কিংবা সময়ের ঠিক ব্যাবহার করবেন।
তবে সব শিক্ষকই যে এমনটা হন তা নয়। সকলেই যদি এমনটা হতেন, তবে পৃথিবী রসাতলে যেত। কোনও কোনও শিক্ষক হন, যাঁরা দেবতার মতো। আজ এই পুণ্য অবসরে আমার শ্রদ্ধা সেইসব দেবতার মতো ছাত্র দরদী শিক্ষকদের জন্যে।