পোর্টজিন

“বেড়াল” লিখেছেন আবীর গুপ্ত

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।

 

bengal live portzine abir gupta

 

রমেনের মতো ভালো ছেলে পাওয়া নাকি খুবই মুশকিল – এটা ওর বন্ধু-বান্ধবেরা বলে। সৎ, দিলখোলা, মিশুকে শুধু নয় পরোপকারীও। যে কোনও প্রয়োজনে ওকে খবর দিলেই হল, সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে যাবে। রমেনের দু-একটি ব্যাপার শুধু অদ্ভুত! একটা হল অস্বাভাবিক বেড়াল ভীতি আর দ্বিতীয়টা হল হঠাৎ হঠাৎ মদ খেয়ে নেশা করে বেসামাল হয়ে যাওয়া। বেড়াল ভীতির একটা কারণ খুঁজে বার করা সম্ভব হয়েছে। সেটা হল, ছোটবেলায় ওকে একবার বেড়ালে কামড়ে ছিল, ডাক্তারের পরামর্শে ওকে ভয়ঙ্কর দেখতে গোটা বারো ইনজেকশন নিতে হয়েছিল। কিন্তু, নেশা করা! এমনিতে ও মদ্যপান করে না, বিড়ি সিগারেটও খায় না। মাঝে মাঝে শুধু একটু মদ খায়, তাও কালেভদ্রে, বছরে একবার কী দুবার। কিন্তু যখন খাবে তখন এমন খাবে যে একদম পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। তখন, নানারকম উদ্ভট কাণ্ডকারখানা করে বসে। ওরকম অবস্থায় নানান মজার কান্ড কারখানা করে বলে বন্ধুরা তা উপভোগও করে। একবার নেশা করে সারারাত একটা গরুর খুড়ে মাথা ঠেকিয়ে শুয়েছিল! ওই গরুটা নাকি ভগবান!
রমেন একদিন বিয়ে করলো। রমেনের বাবা-মা নেই, দুজনেই রমেন যখন ছোট তখন একসঙ্গে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। কারণ জানা যায়নি। প্রতিবেশীদের ধারণা, রমেনের বাবার মাথায় ছিট ছিল, নিজের স্ত্রীকে মেরে তারপর আত্মহত্যা করেছিলেন। প্রচুর টাকা রেখে গিয়েছিলেন। রমেনের এক বিধবা পিসিই রমেনকে বড়ো করে তোলেন। সেই পিসিও মারা গেছেন। তাই, বন্ধুবান্ধবরা সবাই মিলে মেয়ে দেখে রমেনের বিয়ের ব্যবস্থা করলো। মেয়েটার নাম অনিতা, খুব ভালো মেয়ে, একটু কালো কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর। স্বভাব চরিত্রও বেশ ভালো। শুধু রমেনের ক্ষেত্রে ও ছিল একেবারেই বেমানান!
বিয়ের পর কয়েকদিন বেশ ভালোভাবে কাটলো। তারপর রমেন জানতে পারল ওর বউয়ের বেড়াল প্রীতির কথা। অনিতার বাপের বাড়িতে দশটা বেড়াল, একেকটা বেড়ালের একেকটা নাম! বেড়ালগুলোর ওকে ছাড়া নাকি চলে না! ওর বিয়ে হয়ে যাওয়াতে বেড়ালগুলো খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে কান্নাকাটি করছে! একদিন অফিস থেকে ফিরত এসে দেখলো শোবার ঘরের বিছানায় অনিতার কোলে একটা সাদা কালো বেড়াল। রমেন যখন অফিসে, তখন অনিতা আর না পেরে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। রমেনের প্রচন্ড রাগ হল। এদিকে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী! অনেক ভেবে শেষে সোজাসুজি অনিতাকে বললো –
– আমি বেড়াল সহ্য করতে পারি না। এ বাড়িতে হয় বেড়াল থাকবে নয় আমি থাকবো।
অনিতাও বেঁকে বসলো, পরিষ্কার জানিয়ে দিলো বেড়াল ছাড়া ওর পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। তবে একটা কাজ ও করতে পারে, যতক্ষণ বাড়িতে রমেন থাকবে ততক্ষণ বেড়াল ছাদের চিলেকোটার ঘরে থাকবে। রমেন অফিস গেলে তখন বেড়াল ঘরে আসবে। রমেন এই ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হল। বুঝতে পারছিল, সম্পর্কে চিড় ধরছে। বাড়িতে ফিরলেই সর্বত্র ও বেড়ালের গন্ধ পায়। অফিস থেকে সোজা বাড়ি না ফিরে তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে দেরিতে বাড়ি ফেরে। রাতে অনিতাকে জড়িয়ে ধরার সময় বেড়াল বেড়াল গন্ধ – অসহ্য। ও বুঝতে পারছিল না কী করবে, নানান উপায়ের কথা ভাবছিল। শেষে, মনস্থির করল ডিভোর্স চাইবে। অতদূর যেতে হলো না, সুযোগ এসে গেল। কয়েকদিন বাদে একদিন অনিতা জানালো ও মার কাছে যাবে, একরাত থাকবে। শনিবার যাবে, রবিবারে রাতে বাড়ি ফিরবে। রমেন ভাবলো এই সুযোগ, সানন্দে রাজি হয়ে গেল।
শনিবারে অফিস গেল না। সকালে অনিতা বেরিয়ে যাওয়ার পর, বাড়ি বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লো। সোজা নিউমার্কেট। খুব শক্তিশালী একটা পাখি মারা বন্দুক আর টোটো কিনলো। তারপর, আবার বাড়ি। বাড়িতে ফিরে প্রথমেই সদর দরজা বন্ধ করে মিউজিক সিস্টেমে খুব জোড়ে একটা ইংরেজি জগঝম্প গান চালিয়ে দিল। তারপর বন্দুকে টোটা ভরে হাতে একবাটি দুধ নিয়ে সোজা ছাদের চিলেকোঠার ঘরে। খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে চিলেকোঠার দরজা অল্প একটু খুললো। ভিতরে উঁকি মেরে দেখলো বেড়ালটা একটা কাঠের প্যাকিং বাক্সের ওপর শুয়ে আছে। দুধের কোনও প্রয়োজন নেই। সন্তর্পনে বন্দুকটা দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে বেড়ালটার মাথায় তাক করলো। বেড়ালটা শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে আদুরে চোখে তাকালো। ঘোড়াটা টিপলো। অত কাছ থেকে গুলি, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও দুবার গুলি করলো। তারপর নাকে রুমাল বেধে বেড়ালটার লেজ সাঁড়াশি দিয়ে ধরে একটা বস্তায় পুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বস্তাটা পাশের ডোবায় ফেলে এল। বাড়িতে এসে ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো দিয়ে ছাদের কল থেকে জলে ভিজিয়ে ভালো করে রক্ত টক্ত সব মুছলো। যখন চারপাশে তাকিয়ে কোন লাল দাগ দেখতে পেল না, তখন নিশ্চিন্ত হল। ছাদের দরজাটা ইচ্ছা করেই খুলে রাখলো। চিলেকোঠার দরজাটা কিন্তু বন্ধ করে ছিটকিনি দিয়ে দিল। ব্যাস, এইবারে শান্তি। এত আনন্দ ও জীবনে পায়নি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা বড়ো রামের বোতল কিনে আনলো। স্টোররুমে চানাচুর ছিল। আর কী চাই! শনিবার সন্ধ্যাতেই অনিতা ফিরল, বাড়িতে মন টিকছিলো না। রমেনের জন্য নয়, বেড়ালটার জন্য। একদিন থাকবে না, অথচ ও বেড়ালের খাবার রেখে যেতে ভুলে গিয়েছে।
কলিং বেলের আওয়াজে রমেন একটু চমকে উঠলো। আজকে তো কারও আসার কথা নয়! বন্ধুদেরও ফোনে জানিয়ে দিয়েছে আজ ও বাড়িতে থাকবে না। তিন পেগের মতো রাম খাওয়া হয়ে গিয়েছে, অল্প অল্প নেশাও হচ্ছে। দরজা খুলে অনিতাকে বেড়াল কোলে দেখে আঁতকে উঠলো। একদম সেই বেড়ালটা, যেটাকে ও একটু আগেই মেরে ডোবায় ফেলে এসেছে! কী করে সম্ভব! মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো –
– এই বেড়ালটা কোথা থেকে এলো!
তারপরেই নিজেকে সামলালো। অনিতা হেসে কী একটা বললো, ও ঠিকমত শুনতেই পেল না। অনিতা ড্রয়িংরুমে ঢুকে মদের বোতল দেখে নাক কুঁচকে ছাদে চলে গেল। ওকে বেশি ঘাটাতে চাইলো না। রমেন ভেবেছিল বেশি মদ খাবে না, কিন্তু বেড়ালটা দেখে এতই ঘাবড়ে গিয়েছিল যে সমানে রাম খেয়ে চললো। তারপর, একসময় টলতে টলতে শোবার ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
অনিতা যখন বলছিল যে এই বেড়ালটা আগের বেড়ালটার জমজ, খুব কান্নাকাটি করছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে না দেখে নিয়ে এসেছে, তখন তা ঘাবড়ে গিয়ে খেয়াল করে নি। করলে হয়তো –
মাঝরাতে রমেনের কী একটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেল। দেখলো, একটা নরম হাত আর পা ওকে জড়িয়ে আছে! ওর একটা কীরকম যেন অনুভুতি হচ্ছিল! হঠাৎ খেয়াল করলো, একটা গোল মতন মুখ, তারপরই আবিষ্কার করলো একটা বেড়াল, মানুষের মতো বড়ো, ওকে জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে! মুখটা অন্ধকারেও বুঝতে পারলো, সেই কালো বেড়ালটা, গায়ে তীব্র বেড়ালের গন্ধ! পাগলের মতো হেসে উঠলো, বললো –
– ভেবেছিস কী? তোকে মারতে পারবো না? তবে দেখ।
পরের দিন সকালে ঠিকে ঝি অনেকবার কলিংবেল টিপলো, তাতেও কেউ দরজা খুলছে না দেখে পাশের বাড়িতে খবর দিল। তারপর লোকজন জড়ো করে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখলো, রমেন বদ্ধ উন্মাদ, আবোল তাবোল বকছে। বিছানায় সম্পুর্ণ অনাবৃতা স্ত্রী মৃত অবস্থায় শুয়ে। রমেন নিজের স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছে।

 

কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।

Related News

Back to top button