পোর্টজিন
ভৌতিক গল্প “নরেন কাকা” লিখেছেন সমর আচার্য্য
Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
অমাবস্যার রাত l শনিবারের হাফ অফিস করে সকাল সকাল বাড়িতে ফিরে আর কোথায়ও বের হইনি l আকাশে খুব মেঘ করেছে—যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে l
খাওয়া দাওয়া সেরে একটু আগে আগেই শুয়ে পড়লাম l রমলা কি একটা পত্রিকা পড়ছিল, সেটা বন্ধ করে সে ও পাশে এসে শুয়ে পড়লো l
ঘুম টা প্রায় আসে আসে–এমন সময় বাইরে ভীষণ শব্দ করে ঝড় উঠলো সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি l
দুজনেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ঝড়ের উল্টো দিকের জানালা খুলে ঝড় বৃষ্টির প্রচন্ডতা বুঝতে পারলাম l
কতক্ষন পর ঝড় থেমে গেল, কিন্তু বৃষ্টি চলতে থাকলো l বেশ ঠান্ডা পরিবেশ l গরমের পরে এমন ঠান্ডায় অল্পক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলাম l
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল l ধড়মড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দেওয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম,—দুটো বিশ l এত রাতে কে আসতে পারে, ভেবে রমলা কেও খাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙালাম l
আধা গ্রাম আধা শহর রামপুরের বাড়িতে তখনো ইলেক্ট্রিক আসে নি l হারিকেনের আলোটা একটু বাড়িয়ে টর্স টা হাতে করে দুজনেই দরজা খুলে বের হলাম l
বাইরে আসতেই দেখি, নরেন কাকা দাড়িয়ে আছে, খালি গা, পরনে একটা বিবর্ণ ধুতি, চোখ মুখ কেমন উস্কো খুস্কো l আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম–কি ব্যাপার নরেন কাকা, এত রাতে তুমি কোথা থেকে এবং কেনই বা l
অদ্ভুত একটা মুখের ভাব করে নরেন কাকা বললো, তোমার বাবার খুব শরীর খারাপ, তাই আমি খবর দিতে এলাম l
বাবার শরীর খারাপের কথা শুনে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে, হঠাৎ বাবার এমন কি হলো যে এত রাতে তোমাকে ছুটে আসতে হলো?
নরেন কাকা আমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু l বাবার সহচর বলা যায় l পেশায় চাষী l কিন্তু আমার বাবার সঙ্গে খুবই মনের মিল l যাত্রা পালা হোক আর কীর্তন হোক আর খেলা ধুলো সবেতেই বাবার সঙ্গী l আমাদের ভাই বোনকেও খুব ভালোবাসেন l রাত বিরেত, বিপদ আপদে নরেন কাকা বাবার সঙ্গে লেগে থাকেন l
বাবার শরীর খারাপের কথা শুনে আমি খুবই উতলা হয়ে উঠলাম l রমলা আমাকে সাহস জুগিয়ে বললো, এত চিন্তার কিছু নেই, সকাল হোক দেখা যাক কি করা যায় l নরেন কাকা বলে, না না বৌমা
সকালের অপেক্ষায় থাকলে হয়তো দেরি হয়ে যাবে l তোমরা চট করে রেডি হয়ে নেও, এক্ষুনি বের হলে প্রথম বাস টা পেয়ে যাবে l
রমলা আমার হাত টেনে ধরে বলে, কাকা কোথায় গেল? অন্ধকারে ভিতর থেকে নরেন কাকা আওয়াজ দিলো, এই তো আমি এখানেই আছি l
যাইহোক তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ পত্র রেডি করে নিলাম l রমলা নিজেও রেডি হলো বটে, কিন্তু কেন যেন ইতস্তত করছিল l আমাকে বললো, ব্যাপার টা কিন্তু আমার ভালো লাগছে না l মা তো সুরেশ ঠাকুরপো কে পাঠাতে পারতো l
এদিকে রাত প্রায় শেষ l এক্ষুনি না বের হলে সত্যিই ফার্স্ট বাস পাওয়া যাবে না l তাই আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পরলাম l
শুধু বেরোনোর আগে বাড়িওয়ালা কাকুকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপার টা বলে বাস রাস্তার দিকে পা বাড়ালাম l নরেন কাকা ততক্ষনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন l বাড়ি ওয়ালা কাকু একবার জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু তোমাদের খবর টা কে দিল?
আমি বললাম, আমাদের এক পাড়াতুতো কাকু l
বাসা থেকে কয়েক মিনিটের পথ বাস রাস্তা l
বেশ দ্রুত পায়েই চলতে থাকলাম, যদিও রমলার খুবই কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি l কিন্তু বাস ধরার তাগিদে ওসব চিন্তা মাথায় আসে নি l
প্রথম বাস টা পেয়ে গেলাম l বাসে উঠে বসলাম l কন্ডাকটর ভাড়া চাইতে এলে তিনটে টিকিটের দাম দেওয়াতে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আর একজন কে? আমি পিছনের দিকে দেখিয়ে বললাম,- ঐ তো পিছনের সিটে l কন্ডাকটর কি বুঝলো জানিনা, তিনটে টিকিট দিয়ে তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল l
আমাদের বাড়ি এক্কেবারে বাস রাস্তার ধারে l বাস টা যখন বাড়ির কাছে নামিয়ে দিল, তখনো হাল্কা অন্ধকার আছে l
বাস থেকে তিনজনে নামলাম l নেমেই নরেন কাকা বললো, তোমরা বাড়িতে যাও l আমি আমার বাড়ি হয়ে আসছি l কয়েকটা বাড়ির পরেই নরেন কাকার বাড়ি l নরেন কাকা আধা অন্ধকারের মধ্যে তার বাড়ি পথে এগিয়ে গেল l আর তাকে দেখতে পেলাম না l
ঐ সকালে আমাদের দুজনকে বাস থেকে নামতে দেখে মা ছুটে এলেন l খুব সকালে ঘুম থেকে মা রোজ ই ওঠেন l তারপর গত রাতে যে কি ঘটনা ঘটেছে তা তো আন্দাজ করতেই পারছি l অতএব কথা না বাড়িয়ে মা কে জিজ্ঞাসা করলাম,–কি মা, বাবা কেমন আছে, আর বাবার হয়েছে ই বা কি?
মা আমাদের দেখে কেঁদে ফেললেন, কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই তোর বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না l তার মধ্যে কাল বিকেলে বাথরুমে পরে গিয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায় l তাড়াতড়ি সুবল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় l তিনি ওষুধ পত্র দিয়ে বলেছেন আজকের রাত টা দেখতে l যদি সুস্থ না হয় তবে
হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে l
এক নিঃশ্বাসে এতগুলো কথা একসঙ্গে বলে হাপিয়ে উঠলেন l তারপর খুবই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন—-তা তোরা খবর পেলি কি করে, আমি আর একটু বেলা হলেই সুরেশকে পাঠাবো ভেবেছিলাম l
আমি আর রমলা দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলাম,
কেন তোমরা ই তো নরেন কাকা কে পাঠিয়েছ, নরেন কাকাই তো ঝড় বৃষ্টির পরে আমাদের ওখানে গিয়ে খবর টা দিয়ে নিয়ে এলো l ঐ তো বাস থেকে একসঙ্গে নেমে কাকা নিজের বাড়ির দিকে গেল l
কথাটা শেষ ও হয় নি, মা আমার হাউ হাউ করে চিৎকার করে উঠলেন l বলিস কি রে, তোদের নরেন কাকা তো গত পরশু হঠাৎ ই স্ট্রোকে মারা গিয়েছে l ততক্ষনে ভাই বোনেরাও সব উঠে পড়েছে l সবাই কেমন থ মেরে দাড়িয়ে রইলো l
বাবা এখন একটু সুস্থ l আমাদের কথা বার্তা তার কানে গেল l হাত দিয়ে কাছে ডেকে আস্তে করে বললেন, তোরা এসেছিস l আয় কাছে আয় l কাল তো আমি মরেই গিয়েছিলাম l তারপর নিজেই নিজের মনে বলে উঠলেন—হায় রে বন্ধু, মরে গিয়েও তুমি আমার সাথে আছো l হে ঠাকুর আমার বন্ধুর আত্মা যেন শান্তি পায় l
ওদিকে আমার বৌ রমলার মাথায় সবাই তখন জল ঢালছে ll
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।