ভাষার পৃথিবী, পৃথিবীর ভাষা – অর্নেশ ভট্টাচার্য্য

Bengal Live পোর্টজিনঃ পোর্টজিন কি? পোর্টজিন একটি অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার এটি বেঙ্গল লাইভের (bengallive.in) এর পোর্টজিন বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়।
তুই কি লেখা ছেড়ে দিলি? আর লিখবি না…!! এমন প্রশ্ন যখনই উদীয়মান হয় তখন যে ভাষাতেই লিখি না কেন মাতৃভাষা মানে বাংলা সবার আগে কিরণ দেয় ৷ আসলে এত ভীন ভাষার বৈভবে কখন যে মোরা মোদের পরম হিতৈষীকেই হারা করে ফেলেছি সেটা আমাদের অবকাশেও থাকে না কিছুটা অবচেতন মনও বলতে পারেন ৷ এই যে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ মানে আমাদের বুড়া সে নাকি ফরমান জারি করেছে সে আর ইংলিশের সঙ্গে থাকবে না সে এবার ছুটি চায় ৷ ছুটি! কার জন্য?- কেন? জিহ্বা অমনি বলে ওঠে কেন? – ওর নতুন সহচরী ইংলিশ ৷ তর্জনী উত্তর দেয় ওর ওই ইংলিশ ভিংলিশ ওকে আজকাল পাত্তাই তো দেয় না, সঙ্গে আবার পৃথক পেয়ে গেছে তাই শুনছিলাম বুড়াকে দেখলেই চোখ রাঙায় তাই ওর খুব দুঃখ ও ভাবছে ও হয়ত পুরাতন তাই চাপটা গোবেচারা নিতে পারেছে না ৷ বাংলা যার জন্য ‘প’ ‘ম’ শিখে প্রেম করতে জানলো সেই তাকে বাদ দিয়ে একটু উপরে উঠেছে আর ধপাস ধুম হয়েছে ৷ অনামিকা একটু রসিয়ে এ আবার নতুন কি! দেখছ না আমি কেমন দিব্যি মজে আছি বাংলায়, সুযোগ মত বলি সুযোগ মত চুপ থাকি ৷ বাংলা বাংলাই অত আধিক্য নেই ৷ কনিষ্ঠা সবার ছোট তাই সে চুপিসারে বলল আমি একটা কথা বলব? মধ্যমা বলে হ্যাঁ সবাই যখন বাক্যির স্তোক ছোটাচ্ছে তুমি খামোকা কেন চুপ রে থাকবে তুইও আওড়া ৷ সকাল বেলা ফেসবুকে মুখ দেখিয়ে একটা পোস্ট দেখলাম ভাষা দিবসে এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে একটা গোলাপ উপহার দিয়ে বলেছিল কি ভাবলাসি না একটা শব্দ ৷ প্রেমিকা তখন তার প্রেমিকের গন্ডদেশে তাঁর হাতের নখ দিয়ে একটা শব্দ কেটে দিয়েছিল যে No ৷ প্রেমিক তখন বলল মানে? প্রেমিকা উত্তর দিয়েছিল “ইউ ডোন্ট নো ইংলিশ ইজ মাই চার্মিং ৷” সেই পোড় খাওয়া প্রেমিক কি আমাদের বুড়া? তর্জনী উঁচিয়ে বলল কদ্দিন ধরেই নিরীক্ষণ করছিলাম ও কেমন যেন বদলে যাচ্ছে ওই তখন পৃষ্ঠা আমাকে বলেছিল ওতো বাংলা ভালো শেখেনি তাই ইংরাজীতে ওর… কলম বাবু কোত্থেকে এসব শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে বলে তাহলে দেখছ তো বাংলার কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বাংলা অতঃপর ইংরাজি ৷ সবই তো বুঝলাম এখন প্রশ্নটা হচ্ছে বুড়া কি ভাবছে তাহলে? ও কি বাংলাতে ফিরবে নাকি সেই ইংলিশেই মুখ ঢাকবে? জিহ্বা প্রশ্ন করল ৷ তাহলে চলো আমরা সবাই একত্রে যাই সভা করি ওর কাছে ৷ সবাই এভাবে জটলা করে গেল অঙ্গুষ্ঠের সমীপে ৷ গিয়ে সবাই অঙ্গুষ্ঠকে জিজ্ঞেস করল ৷ কিরে বুড়া আমাদের তো ভুলেই খেয়ে ফেলেছিস, আমাদের তো তোর আর দরকারেই লাগে না ৷ অঙ্গুষ্ঠ বলল না; যে রাতো আকে এত কিছ শেলি তাকে কি ভুইতে পারি? বলো ৷ অনামিকা একটু রেগেই বলল ওরম মনে হয় রে, ওই ইংলিশ ভিংলিশের স্কেলের মত দেখতে ওর কাছেই তো অহোরাত্রি বসে কি যে পঙ্কচর্যা করে যাচ্ছিস বুঝি না ৷ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বলল তোর আর বুঝে কাজ নেই তোরা কি দাবি নিয়ে এখানে কেন এসেছিস বল ৷ পৃষ্ঠা বলল এই বুড়া বুড়া অত রাগ করিস না শোন না আমরা তোকে একটা কথা বলতে এসেছি বলছি; ছুটি যদি নিতেই হয় ওর কাছ থেকে নে ৷ আর বাংলার কথা যদি বলিস তোর তো তা এমনিতেই ধাতে সহেনা … ৷ বুড়া প্রত্যুত্তরে বলে নারে, বালা আমমারর হিদদে আর ইংলিশ আমমার মুকে তাচরা আমমারর গাল দেসচিশ নো লাল রতের দা, দু টুফা রক্তও ঝচ্চিল ওই দু টুফা রততে আমি 21টা rose ড্রএর সেচটা করেচিলম কত্তু পারিনি আসলে কি বল তা ভাষকে আমারা ভাষ ভাষ… ৷ কনিষ্ঠা বলে ভাষাহীন ৷ বুড়া বলে হাঁ ভাষহীন করে ফেলচি তাই হটতো কমল ভাইকে নিয়ে ওই দু টুফা রত্তে যকন 21টা রোস আঁত্তে গেলাম ততন আমমার যেন আটালো ৷ তাই আম রোস না ড্র কত্তে পেররে একটা বন্ন ড্র করিচি ৷ কনিষ্ঠা বলল বর্ণ? কি বর্ণ? থামলি কেন বল শুনি ৷ জিহ্বা বলল তুই একটু চুপ করলে তবে তো ও বলতে পারবে ৷ বুড়া বলল আমমার বন্নর নাম হচ্ছে ‘ম’ মানে এ বালা ককনো মরে যাব নো দেখ নিস তাই আমি একনও লাভ ইউ নো তুমমায় ভাবলাসি বলেই মন জয় কত্তে চেট্টা করি এককানেও তাই কছিলাম কিত্তু আমি ফেইল্ড ৷ আরে ছাড় তো; তর্জনী উঁচিয়ে বলল তাহলে আমরা আছি কি করতে, এই দেখ না এত আধুনিক হয়েও আমি এখনো স্কুলকে বিদ্যালয় বলি, তাতে কি কোনো দোষ ঘটে…. কি মধ্যমা? মধ্যমা বলে হ্যাঁ বটেই তো ৷ আমি আর আমার বন্ধু মানে ধর অক্ষর জানিস এখনো আমরা নিজের হাতে যা কিছু লিখি বাংলাতেই লিখি ইংলিশে নয় হ্যাঁ পরে হয়ত সেটাকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করি কিন্তু প্রথম পছন্দ সেই বাংলাই ৷ পৃষ্ঠা বুড়াকে শুধায় আজকে কি দিন জানিস? বুড়া উত্তর দেয় নো আজ কোন ডিন? দেখ সব কিছুর চক্করে তুই আজকের দিনটাই মনে রাখিস নি তাই আমরা ঠিক করেছি তোকে একটা সারপ্রাইজ দেব, ওখানেই বলব আজ কি দিন ৷ বৃদ্ধ বলে কিকরম সারপ্রাইজ বল ৷ চল্ তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব? গিয়ে দেখবি ওখানে তোর মত স্কুলে যেতে যেতে একটু পড়ে গেলেই ফ্যাঁচফিঁচিয়ে কেঁদে উঠতো, বাংলা লিখব না বলে ইংরাজি ভুল করতো যে ছেলেগুলো তারাই আজ বড় হয়ে ইংরেজি কে বাংলার পরিচ্ছদ করে ফেলেছে ৷ দেখবি চল ৷ সব বন্ধুরা হেঁটে গেল কালের ওপারে ৷ আবার সাল ২০২১ একই জায়গায় সকলে বিরাজমান ৷ অনামিকা বুড়াকে বলে চিনতে পারছিস? বুড়া বলে ওঠে মোটামুটি তবে দেখ ওই দূরে একটা ছেলে কাঁদছে মনে হচ্ছে না? চল ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি ও কেন কাঁদছে ৷ জিহ্বা বলে ওঠে আরে বুড়ু তুই চমৎকার বাংলা বলছিস রে ৷ বুড়ু সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে কেন বাংলাই তো বাংলা শিখিয়েছে তার ছেলেকে ৷ এবার সবাই গমন করে ছেলেটার অভিমুখে ৷ অবাক কান্ড ছেলেটা কে প্রায় বুড়ার মতনই দেখতে ৷ বুড়া কিঞ্চিৎ সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছেলেটা কে প্রশ্ন করে এই তুমি কাঁদছ না হাঁসছ? ছেলেটা উত্তর দেয় তুমি দুফোটা রক্তে যে ২১টা গোলাপ আঁকার চেষ্টা করেছিলে that’s I am trying to build a house with love… বুড়া বলে ভালো তবে এই যে শেষে ইংরাজী টা ঝাড়লে এটাকে ভালোবাসায় নয় বসন্তের ফুল করে রেখো মানে মুকুল যেন থাকে বাংলাতে ৷ আর বাংলাকে পারত্রিক নয় পার্থিব করো ৷ ছেলেটি তখন বলে সেইজন্যই রক্ত নয় ভালোবাসা কারণ বাংলা ভাষার মধ্যে রক্ত ঝরেছে অনেক ভালোবাসা ফুটেছে কম তাই ভাষার পৃথিবীতে বাংলা বাসার নাম যেন হয় পৃথিবী ৷ বুড়া বলে ওঠে সেইজন্যই তো আমার ঘরে এখনো বোম্বা গড়ের ছবির প্রেম আর ধূসর পান্ডুলিপি সেখানে আস্ত একটা হোমাগ্নি ৷ ছেলেটা বলে এই যেমন সত্ত্বা আর অস্তিত্ব তুমি আমার অস্তিত্ব আর আমি তোমার একনিষ্ঠ সত্ত্বা ৷ বুড়া হকচকিয়ে বলে ওঠে তার মানে? ছেলেটা উত্তর দেয় হ্যাঁ এই যে এতক্ষণ আমাদের যে আলাপচারিতা সেই তুমি আমার অস্তিত্ব কালের ওপারে যে তুমি ছিলে তা কালের এপারে আমি ৷ পরস্পর পরস্পরে বাংলার মারফত আবার নতুন করে খুঁজে পেল অস্তিত্ব আর সত্ত্বা ৷ সেতুবন্ধন অলক্ষে বাংলা, আসলে বাংলা সে অধিকার আমাদের দিয়েছে ৷ কনিষ্ঠা শ্লেষবাক্যে মন্তব্য করে সত্ত্বা কে আচ্ছা, আপনি যে হাসা-কাঁদা করছিলেন এটা কি ইংরেজিতে করছিলেন? সবাই হো হো করে হেসে ওঠে আরে কাঁদার কোন প্রতিশব্দ আছে নাকি আমাদের হাঁসি মানেও বাংলা কাঁদা মানেও বাংলা পার্থক্য শুধু পৃথিবীতে ৷ তর্জনী বলে এর উপসংহারে যে সমুদ্দূর আর আকাশ, সেখানেই তো কান্নার বাসা হাসি সুখ প্রেমের ঘর গেরস্তালি ৷ মানুষের ভাষা অতদূর যেতে পারে না ৷ কলমবাবু বলে ওঠে তাহলে তো এর একটা ভালো নামকরণ দেওয়া উচিত ৷ সবাই এক স্বরে বলে নিশ্চয়ই,, হোক হোক ৷ পৃষ্ঠা বলে আমি একটা নাম ভেবেছি বলব? মধ্যমা বলে অবশ্যই ৷ পৃষ্ঠা বলে ভাষার পৃথিবী ৷ অনামিকা বলে কেমন যেন খালি খালি!! কলমবাবু কলম হাতে তুলে নিয়ে লেখেন তাহলে নাম রাখলাম ভাষার পৃথিবী,
পৃথিবীর ভাষা ৷
কীভাবে লেখা পাঠাবেন?
নীচে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার কিংবা ইমেল আইডিতে লেখা পাঠাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার~ 9635459953
ইমেল আইডি~ bengalliveportzine@gmail.com
লেখার সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং একটি ছবি পাঠানো আবশ্যক।
ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে নিজের তোলা দুটো ছবি পাঠাতে হবে।