Archiveউৎসব

কেন এত টান বন্দর আদি দুর্গামন্দিরের পুজোয় ? মা কি এখানে জাগ্রত ?

Nblive ওয়েব ডেস্কঃ রায়গঞ্জের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহি দুর্গা পূজাগুলির মধ্যে অন্যতম রায়গঞ্জ বন্দর আদি দুর্গা মন্দিরের দুর্গা পূজা। আনুমানিক ৪০০ বছর পূর্বে এই মন্দির স্থাপন করা হয়েছিল। যদিও স্থাপন কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ মনে করেন বাংলায় মোঘল শাসন কালে যখন কুলিক নদীর পূর্ণ যৌবন, সেই সময় ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রায় সমস্ত কাজ কুলিক নদী মারফৎ হত। বড় বড় সওদাগরী নৌকা কুলিক নদীর বন্দর ঘাটে এসে নোঙর করত। সেই সময় বাইরে থেকে প্রচুর মানুষের আগমন ঘটে এলাকাতে। তাদের মধ্যেই বেশ কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষের সৌজন্যে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে মনে করা হলেও কারোর কারোর মতে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা রঘুনন্দন গিরিগোঁসাই। তদের অন্দোলনের সময়ই এই মন্দির গড়ে ওঠে।

সাবেক কাল থেকেই দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে বন্দর এলাকাতে মেলা বসত। এই মেলা ছিল সকল শ্রেণীর মানুষের মিলনের স্থান। পরবর্তিতে মন্দিরের পূজা সর্বজনীন পূজায় পরিণত হয়।
প্রথম দিকে টিনের চাল দিয়ে ঘেরা ছিল মন্দির । সেখানেই প্রতিদিন দেবীর পূজার ব্যবস্থা হত। এলাকার সকল মানুষ একত্রিত হয়ে এই পূজার কাজে হাত এগিয়ে দিতেন । বেশ কয়েক বছর আগে রায়গঞ্জের মানুষের অনুদানে মন্দির পাকা করা হয়।
স্থাপন কাল থেকেই প্রতিমার কাঠামো একই রাখা হলেও ১৯৫৩ সালে কুলিকের ভয়াবহ বন্যায় তা ভেসে যায়। পরবর্তিকালে নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়। তারপর থেকে সেই কাঠামোতেই প্রতি বছর দেবী প্রতিমা তৈরি করা হয়। বেনারসি পরিয়ে দেবীকে পঞ্চমীর দিন পঞ্চমুন্ডির আসনে বসানো হয়।
পূজা কমিটির বর্তমান সম্পাদক রুপেশ সাহা বলেন, মহালয়ার দিন থেকেই পূজার যাবতীয় কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। এতবড় উৎসবের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোনদিনই চাঁদার মারফৎ যোগার করতে হয়নি। রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা নিজে থেকেই মন্দিরে এসে তাদের সামর্থ্য মত অর্থ দান করে যান।
চণ্ডী পাঠের মাধ্যমে পূজার শুভারম্ভ ঘটে। অষ্টমীতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে অঞ্জলি। সেখানে কয়েকশ মানুষের জমায়েত হয়। এছাড়াও মাটির ডালা সহযোগে পূজা দেন হাজার হাজার মানুষ। নবমীর পূজা শেষে কয়েক হাজার মানুষ পরমান্ন প্রসাদ গ্রহণ করেন। এবং পূজার প্রতিটি দিনই টেবিল চেয়ার পেতে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে দশমীর পূজা শেষ হওয়ার পর সিদ্ধি প্রসাদ বিতরণ করা হয় আগত দর্শনার্থী ও ভক্তদের। এবং নৌকায় চাপিয়ে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই পূজাকে কেন্দ্র করে আগে যে মেলাটি বসত ক্রমবর্ধমান লোক বসতির চাপে বর্তমান সময়ে মেলার আকার ছোট হলেও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা আজও অটুট।

Back to top button