টাইপিং স্কুল থেকে চায়ের দোকান, বদলে গিয়েছে বংশী দার জীবন সংগ্রাম
রায়গঞ্জের প্রথম টাইপিং স্কুল থেকে চায়ের দোকান। ৭১ বছরের জার্নির মাঝেই বদলে গেল প্রতিষ্ঠানের রূপ। বদলে গেল শহরের প্রথম টাইপিং স্কুলের প্রশিক্ষকের জীবন।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ টাইপ রাইটারের খটাখট শব্দই আজ বদলে গিয়েছে, চায়ের দোকানের কোলাহলে। মানুষের যাতায়াত একই রয়েছে, বদলেছে শুধু প্রয়োজন। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ফুড়িয়েছে টাইপ রাইটারের ব্যবহার। জায়গা করে নিয়েছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ। প্রয়োজনের অভাবে একদিকে যেমন টাইপ রাইটার থেকে মুখ ফিরিয়েছে সাধারণ মানুষ, তেমনই টাইপ রাইটারকে কেন্দ্র করে যাঁদের জীবিকা নির্বাহ হতো, তাঁদেরকেও বদলে ফেলতে হয়েছে আয়ের পথ। রায়গঞ্জের প্রথম টাইপিং স্কুল থেকে চায়ের দোকান। ৭১ বছরের জার্নির মাঝেই বদলে গিয়েছে প্রতিষ্ঠানের রূপ। বদলে গিয়েছে শহরের প্রথম টাইপিং স্কুলের প্রশিক্ষকের জীবন। জীর্ণ শরীরে জীবন বদলের সেই কাহিনী শোনালেন বংশী দা।
পোস্টার ঘিরে জল্পনা রায়গঞ্জে, মুখ্যমন্ত্রী, পুরপতির প্রশংসা বহিষ্কৃত তৃণমূল কাউন্সিলরের মুখে
জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় ৭১ বছর আগে ১৯৫০ সালের ২রা জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল রায়গঞ্জের প্রথম টাইপ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের। সুদর্শনপুরে দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র স্কুল লাগোয়া একটি বাড়িতে মাত্র দুটি টাইপ রাইটার দিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করেছিলেন অজিত দত্ত। অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুরের অন্তর্গত রায়গঞ্জের সেটিই ছিল প্রথম টাইপ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। চাহিদা যত বেড়েছে ততই বেড়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের টাইপ মেশিনের সংখ্যা। দুই দিনাজপুর, মালদা ছাড়াও আশাপাশের বিভিন্ন এলাকা এমনকি বিহারের বেশ কিছু জায়গা থেকেও আসতে শুরু করেন চাকরি প্রার্থী যুবক-যুবতীরা৷ ধীরেধীরে আকারে বড় হয় স্কুল। একে একে ৩৭টি মেশিন কেনেন অজিত দত্ত। সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলতো ক্লাস। অজিত দত্ত ওরফে বংশী বাবুর কথায়, প্রতি বছর কয়েক হাজার যুবক-যুবতী এই স্কুল থেকেই প্রশিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আজ অনেকেই অবসরপ্রাপ্ত।
স্মরণে শঙ্খ ঘোষ, রেখে গেলেন কালজয়ী সৃষ্টি সম্ভার
তবে ১৯৫০ সাল থেকে একটানা ৬২ বছর টাইপ স্কুলের অস্তিত্ব বজায় থাকলেও ২০১২ সালে ছন্দপতন ঘটে। ছাত্রের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। মড়চে ধরা টাইপ মেশিন গুলি অবশেষে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন অজিত দত্ত।
বয়স আজ তাঁর ৮৭। কয়েকবছর আগে পরলোক গমন করেছেন অজিত বাবুর স্ত্রী। এখন সংসার বলতে শিক্ষিত বেকার ছেলে, বউমা ও এক নাতনি। সংসার টানতে তাই পেশা বদলে চায়ের দোকান শুরু করেছেন বংশী বাবু।
শুক্রবার সেই বংশী বাবুর খোঁজেই বেঙ্গল লাইভ পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর সুদর্শনপুরের বাড়িতে। বাড়ির সামনেই এখন তাঁর নতুন কর্মস্থল। জনবহুল শিলিগুড়ি মোড় লাগোয়া বংশী বাবুর চায়ের দোকানে শোনা গেল চা প্রেমীদের কোলাহল। তবে দেখা মিলল না অজিত দত্তের। দোকানের পেছনেই তাঁর বাড়ি। সেখানে খোঁজ করতেই জীর্ণ শরীরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন বংশী দা। টাইপ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রসঙ্গ উঠতেই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। বললেন সে তো দীর্ঘদিন আগের কথা। বুকে পাথর চাপা দিয়ে ৩৭টি টাইপ মেশিন বিক্রি করে দিয়েছি। কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা মেশিন গুলোতে মড়চে ধরেছিল, কাজেও লাগতো না আর।
সকাল হলেই বাড়ির সামনে বাঁশি বাজান গীতা লিপি করুণা স্বপ্না ও কবিতারা
একসময় এই স্কুল থেকে সার্টিফিকেট নিয়েই সরকারি অফিসে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার যুবক-যুবতী। আজ তাঁদের মধ্যে অনেকেই অবসরপ্রাপ্ত। এরপর টাইপ রাইটারের ব্যবহার কমতে শুরু করল জায়গা করে নিল কম্পিউটার। আর তারপর থেকেই ক্রমেই ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০১২ সালে একজনও ছাত্রও না থাকায় অবশেষে বন্ধ করে দেই স্কুল। একমাত্র ছেলে চাকরি না পাওয়ায় শেষে চায়ের দোকান খুলেই আয়ের পথ খুঁজি। এখন এটাই আমার পেশা। দোকানে চা খেতে এসে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন আপনি বংশী দা না? আবার অনেকে সেই পরিচয় না দিয়েই চা খেয়ে চলে যান দোকান ছেড়ে। এইভাবেই চলছে সংসার। ক্ষোভের সুরে অজিত বাবু বলেন, টাইপ স্কুল এখন শুধুই স্মৃতির পাতায়।
মেয়েদের জন্য একা মেয়ের লড়াই, নারী দিবসে বার্তা অ্যাম্বুলেন্স চালক সেলিনার