তাঁর সুরে মুগ্ধ রায়গঞ্জের নেটিজেনরা ভাইরাল করলেন ভিডিও, কে সেই গায়ক?

সোশ্যাল মিডয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁর দরদী সুর ও কণ্ঠ।সুর যত ছড়ায়, কৌতুহল ততই বাড়তে থাকে। ঠিক এখান থেকেই সেই সুরের খোঁজে বেরিয়েছিল Bengal Live।। অবশেষে হদিস মিললো তাঁর।
Bengal Live রায়গঞ্জঃ কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁর দরদী সুর ও কণ্ঠ। যিনি গাইছেন তিনি রায়গঞ্জের বাসিন্দা, অনেকে আন্দাজ করছিলেন বটে। কিন্তু কে এই ব্যক্তি যাঁর গান শুনতে শুনতে চোখ বন্ধ করলে মনে হয়, ঠিক যেন মান্না দে গাইছেন ! ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক শ্রোতার অনুরোধে বাজারে সবজির দোকানে বসেই তিনি অবলীলায় গেয়ে চলেছেন মান্না দের গাওয়া সেই অমর সঙ্গীত — “এ নদী এমন নদী, জল চায় একটু যদি…।” তাঁর গায়কী ও সুরের জাদুতে মজে যাচ্ছেন আশপাশের মানুষজন। কিন্তু কে তিনি ? কোথায় বাড়ি ? কী তাঁর পরিচয় ? সুর যত ছড়ায়, কৌতুহল ততই বাড়তে থাকে। ঠিক এখান থেকেই সেই সুরের খোঁজে বেরিয়েছিল Bengal Live।। অবশেষে হদিস মিললো তাঁর।
জানা গেল, শিল্পীর নাম বাবলু দাস। থাকেন রায়গঞ্জ শহরেরই রবীন্দ্র পল্লীতে। সম্ভাবনা ছিল অনেক বড় শিল্পী হওয়ার। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করেছে অন্য পথে হাঁটতে। ৭০ এর দশকে যাত্রা পালায় অভিনয় করার পাশাপাশি গান করতেন বাবলুবাবু। পরে বাবা অনিল চন্দ্র দাসের পরামর্শে পন্ডিত নারায়ণ কুন্ডুর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে গান থেকে শতহাত দূরে চলে যেতে হয় তাঁকে। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় চার দশক। অভাব অনটনের মাঝে, ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় তাঁর সুরেলা কন্ঠ। দিন কয়েক আগে বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে হঠাৎ সেই সুরেলা মানুষটির খোঁজ পেয়ে যান শহরেরই বাসিন্দা মনোতোষ মুখার্জি। একটি গান ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা মুহূর্তে ভাইরালও হয়।
মোহনবাটি বাজারে এই ভিডিওটি করেছেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা MONOTOSH MUKHERJEE
রবীন্দ্রপল্লীতে এক চিলতে জায়গায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বাবলু দাস। বারোদুয়ারি এলাকার একটি রাইস মিলে লেখালেখির কাজ করেন তিনি। আর্থিক অনটন তাঁর নিত্যসঙ্গী। বাবলু বাবু বলেন, “স্কুলে পড়াকালীন অমল সরকারের কৃষ্ণযাত্রা পালায় রাধার চরিত্রে অভিনয় করার সময় থেকেই গান করতাম। বাংলা, বিহারের একাধিক জায়গায় অভিনয় করেছি। বাবার পরামর্শ মেনে পন্ডিত নারায়ণ কুন্ডুর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করি।”
কিন্তু আর্থিক অনটনের মাঝে এইসব বিলাসিতা বলে মনে হয়। হারমোনিয়াম কেনার মতন সামর্থ্যও হারিয়ে যায় তাঁর। বাবার মৃত্যুর পর গান থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মান্না দে, হেমন্ত, কিশোর কুমারের গানই ছিল সঙ্গী। কিছুটা সময় চুপ থেকেই তিনি বলে ওঠেন, “সেই আমলে মাইকে নতুন কোনও গান বাজতে শুনলেই কাগজে কথা টুকে নিতাম। পরে সুরের সাথে গলা মিলিয়ে গান তুলতে থাকি। দেবীনগর দীপালি উৎসবের মঞ্চেও গান শুনিয়ে স্রোতার মন জয় করেছিলাম। ”
আবারও খানিকটা বিরাম, বিষাদের সুর ভুলে খানিকটা হাসি আর বুকে আশা নিয়ে বাবলু দাস বলেন, আবার নতুন করে গান শুরু করার ইচ্ছে রয়েছে। জানি না, এই বয়সে এসে কতদূর পৌঁছানো সম্ভব হবে!