বেঙ্গল লাইভ Special

উত্তর দিনাজপুরের নদী কাহিনী (চতুর্থ পর্ব)

কুলিক, মহানন্দা, নাগর, টাঙন — প্রধান এই নদীগুলি ছাড়াও জেলার বুকে প্রায় ২৮টি নদীর চিহ্ন। তবে বেশিরভাগ নদীরই আজ প্রবাহ নেই। হাতে গোনা কয়েকটি নদীই আজ বর্তমান। তবে এক সময় এই এলাকা ছিল নদী কেন্দ্রীক। বড়বড় সওদাগরী নৌকা নোঙর করত এই জেলায়। নদী পথে চলত ব্যবসা বাণিজ্য। কিন্তু আজ সেকথা শুধুই ইতিহাস।

Bengal Live রায়গঞ্জঃ

ডাউকঃ তিস্তার উপনদী ডাউক। ডক বা ডোক নামেও পরিচিত ডাউক নদী। বাংলাদেশের তিস্তা থেকে বেরিয়ে জাগির, নন্দগছ ও থোটপাড়া হয়ে ধামরগছে এসে এই নদী ব্যারং নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সেখান থেকে পশ্চিমমুখী হয়ে দলুয়ায় দক্ষিণ দিকে ঘুরে আবার উত্তরবাহী হয়ে পড়ে। উত্তরবাহী হওয়ায় ডাউককে গঙ্গা রূপে পূজা করা হয়। মাঘী পূর্ণিমার দিনে কয়েক হাজার মানুষ এই নদীতে স্নান করে দলুয়া মন্দিরে পূজা দিয়ে থাকেন। এই নদীর তীরে উত্তর দিনাজপুর জেলায় দেবীঝোড়া চা বাগান গড়ে উঠেছে। বাউরিগছে ডাউকের উপর ব্যারেজ রয়েছে। বর্ষাকালে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় ডাউক।

ব্যারংঃ ডাউকের একটি উপনদী ব্যারং। বাংলাদেশের একটি বিল থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার ভৈষভিটাতে প্রবেশ করেছে। এরপর এই নদী পশ্চিম ও দক্ষিণ আরিয়াগাঁ হয়ে পশ্চিম আন্ধারঝারি মৌজায় এসে ডাউকের সাথে মিশেছে ব্যারং। ভৈষভিটাতে এই নদীর উপর একটি অ্যাকোয়াডাক করা হয়েছে।

ভাটাঃ ব্যারং নদীর উপনদী ভাটা। বাংলাদেশ থেকে এই নদীর উৎপত্তি। চোপড়া থানার শীতলগছ লালগছ হয়ে শীতপাড়ায় ব্যারংয়ের সাথে মিলিত হয়েছে ভাটা। এই নদীর জলপ্রবাহ ক্রমেই কমতে থাকায় এই নদী ভাটা নামে অভিহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। গভীরতা না থাকলেও বর্ষায় দুই কূল প্লাবিত হয় এই নদীর কারণে।

কুর্তাঃ করতোয়া নদীর শাখানদী বলে পরিচিত কুর্তা। জলপাইগুড়ি জেলার করতোয়া থেকে সৃষ্ট এই নদী বাংলাদেশ হয়ে এই জেলার চোপড়া থানার উত্তর গোরা সুহিদ মৌজায় প্রবেশ করেছে। ঠুনঠনিয়া বড়ো দামোদর ও বড়ো মির্চার ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুর্তা। কুর্তা ছাড়াও এই নদী করতা ও করতো নামে পরিচিত। সংস্কারের অভাবে মরে যেতে বসেছে উত্তর দিনাজপুরের এই নদী।

রতুয়াঃ নাগরের উপনদী রতুয়া। ইসলামপুর থানার নন্দলাল খোয়া নামক এক বিল থেকে রতুয়ার উৎপত্তি। মাটিকুন্ডা ২, জগতাগাঁ, দুর্গপুর ও বোচাভিটা হয়ে তিলগাঁয়ে নাগরের সাথে মিশেছে রতুয়া। গ্রীষ্মকালে এই নদীর জল শুকিয়ে যায়।

সেরয়ানীঃ নাগরের উপনদী সেরয়ানী। ইসলামপুর থানার নারায়ণ মৌজার একটি বিল থেকে এই নদীর উৎপত্তি। আমবাড়ি, হরিপুরভিটা, ঝাড়বাড়ি অতিক্রম করে সেরয়ানী সোলপুড়ায় নাগরের সাথে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

দোলঞ্চাঃ দোলঞ্চা নাগর নদীর উপনদী। ইসলামপুর থানার সাপনিকলা জঙ্গল থেকে এই নদীর উৎপত্তি। সুজালি, বইরঝাড়ি, ঘোড়ামারা, বোচাভিটা হয়ে কোনীভিটায় এই নদী নাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। একসময় এই নদীর তীরে শাল, শিশু শিরীষের অরণ্য ছিল বলে জানা গেছে।

তথ্যসূত্র – বৃন্দাবন ঘোষ

Related News

Back to top button