প্রণব মুখার্জির একজোড়া হাওয়াই চটি স্মৃতি হয়ে রইলো রায়গঞ্জে
কিছু কিছু মানুষ বন্ধুত্বের রেখা পার করলে আপনজন হয়ে যায়। তখন তাঁর ছেড়ে যাওয়া একজোড়া হাওয়াই চটিও স্মৃতির মানিক জ্বেলে হয়ে ওঠে অমূল্য।
Bengal Laive রায়গঞ্জঃ সালটা ১৯৮৭। রায়গঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শ্যামল ব্রহ্মর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। অচেনা থেকে চেনা হয় দুজন। তারপর সময় যত গড়িয়েছে, সম্পর্কের বাঁধন আরও দৃঢ় হয়েছে। প্রণববাবুর ব্যস্তময় জীবনেও সময় চাইলে অনায়াসে সময় পেয়েছেন শ্যামলবাবু। স্রেফ সম্পর্কের টানে দুর্গাপুর পাবলিক স্কুলের উদ্বোধন করতে শ্যামলবাবুর এক ডাকেই হাজির হয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাছে যেকোনও প্রয়োজনে সাহায্য বা পরামর্শ চেয়ে কখনও ব্যর্থমনোরথ হতে হয়নি রায়গঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শ্যামল ব্রহ্মকে। শ্যামলবাবুর কাছে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন পিতৃতুল্য।
দুর্গাপুর পাবলিক স্কুল তৈরির পর শ্যামলবাবুর অনুরোধেই স্কুলের চীফ প্যাট্রন হতে রাজি হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। স্কুল উদ্বোধনের দিনই প্রণববাবু ব্যবহৃত একজোড়া হাওয়াই চপ্পল চেয়ে নেন শ্যামলবাবু। তিনি বলেন, “আপনাকে তো সবসময় পাবো না। তাই আপনার একজোড়া জুতো আমাকে দিয়ে যান। আমি সংরক্ষণ করে রাখবো। আপনার জুতোজোড়াই হবে আমার প্রতিদিনের পথ চলার অনুপ্রেরণা।” বাৎসল্য স্নেহের বশে শ্যামলবাবুর সেদিনের সেই আবদার শুনে না করতে পারেননি দেশের তৎকালীন শাসনব্যবস্থার সেকেণ্ড-ইন-কমাণ্ড প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেদিন থেকেই চটিজোড়াতে রোজ দুইবার প্রণাম করেন দুর্গাপুর পাবলিক স্কুলের কর্ণধার।
স্বাভাবিক কারণেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শোক বিহ্বল হয়ে পড়েন শ্যামলবাবু। প্রণববাবুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “খুব সহজ মানুষ ছিলেন। আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। কেন করতেন জানি না। তাঁর কাছে কোনওদিন বকা খাইনি। তাঁর এই চটিজোড়া আমার কাছে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে গেল।”