বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের বর্ষবরণ
হাজারো উৎসবের সমাহার এই ভারতবর্ষে। আর এই উৎসবের রঙে মেতে ওঠেন ভারতীয়রা। বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশজুড়ে চলতে থাকে নানা উৎসব সঙ্গে থাকে জমজমাটি নাচ-গান, ভুঁড়িভোজ। তেমনই একটি পার্বণের নাম নববর্ষ। শুধু বাঙালিরাই নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ স্বরীতিতে পালন করেন এই বর্ষবরণ।
Bengal Live ডেস্কঃ সৌর বর্ষপঞ্জি অনুসারে বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে ধরা হয়। তাই এই মাসের প্রথম দিনেই পালিত হয় নববর্ষ। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নানা আঞ্চলিক নাম ও রীতিতে উদযাপিত হয় নববর্ষ।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সাধারণত ১৪ বা ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ হয়ে থাকে। এবছর ১৫ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার হলো ১ লা বৈশাখ।
করোনা আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোলাম রব্বানী
পয়লা বৈশাখ/ নববর্ষঃ
বাঙালির এই নববর্ষের সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের কৃষি সংস্কৃতি। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বাংলা সনের প্রথম দিনই বাংলা নববর্ষ। পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে মেতে ওঠেন। তাই সেই অর্থে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন লোকউৎসব হিসেবেই পরিচিত। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। ব্যবসায়ীরাও দিনটিকে নতুন আর্থিক বছরের সূচনা করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে নেন। এদিন লক্ষ্মী-গণেশ পুজো ও হালখাতার মাধ্যমে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, মিষ্টিমুখ, নতুন পোশাক পরা, শুভেচ্ছা বিনিময়, পরস্পরকে আলিঙ্গন করা এই সবের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেন বাঙালিরা।
এই আটটি বিষয় নজরে রাখলেই কমবে বিদ্যুতের খরচ
বোহাগ/ রঙ্গালী বিহুঃ
অসমের মূল বিহু উৎসব এই রঙ্গালি বিহু ৷ চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিন থেকে শুরু করে টানা এক সপ্তাহ চলে এই উৎসব৷ বৈশাখ মাসের পয়লা তারিখে গান-বাজনা ও বিহু নৃত্যের মাধ্যমে পালন করা হয় রঙ্গালি বিহু ৷ বোহাগ/বিহু আসাম, মণিপুর এবং বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে উদযাপন করা হয়। অসমীয়ারা বছরে মূলত তিনবার বিহু উদযাপন করে থাকেন। তবে এই রঙ্গালি বিহুর দিন চিড়া ও পিঠা জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। উপহারও বিনিময় হয় একে অপরের মধ্যে। প্রবীণদের কাছ থেকে নেওয়া হয় আশীর্বাদ। এছাড়াও নতুন পোশাকে ঐতিহ্যবাহী বিহু নাচে মেতে ওঠেন অসমীয়ারা।
বৈশাখীঃ
ঠিক একই সময়ে উত্তর ও মধ্য ভারতে উদযাপন করা হয় বৈশাখী। ১৬৯৯ সালে এদিন, দশম শিখ ধর্মগুরু, গুরু গোবিন্দ সিং শিখ ধর্ম অনুসরণ করার কথা বলেছিলেন। গঠিত হয়েছিল খালসা সম্প্রদায়। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার উত্তর দিক এবং দিল্লির কিছু অংশে এই দিনটি বেশ সমারোহের সাথে পালিত হয়। পরিবার পরিজন সকলে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানে মেতে ওঠেন। এছাড়াও ফসল ফলানোর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দিন হিসাবে এই দিনটিকে মানা হয়। ভবিষ্যতের সুখ ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা করে শিখ সম্প্রদায় পালন করে বৈশাখী।
গরমে বাড়ীতেই চটজলদি বানান কোল্ড কফি। জেনে নিন পদ্ধতি।
বিশুঃ
কেরল ও কর্ণাটকের কিছু অংশে বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে পালিত হয় বিশু উৎসব। আতশবাজি, আলোতে সেজে ওঠে সব বাড়ি। স্থানীয়ভাবে বিশ্বুপদাক্কম নামে পরিচিত এই উৎসব। নতুন পোশাক, রকমারি খাওয়া-দাওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে পালন করা হয় এই শুভ দিন। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে ফল, চাল, শাক সবজি, পান ইত্যাদি নিবেদন করে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় এই দিনে।
পুঠান্ডুঃ
নববর্ষের সময়ে তামিলনাড়ুতে পালন করা হয় পুঠান্ডু উৎসব। ফুল, রঙ্গোলী ও আলোয় সেজে ওঠে প্রতিটি বাড়ি। এছাড়াও সকলের বাড়িতে আয়োজিত হয় পুজো। অনেকে স্থানীয় মন্দিরগুলি পরিদর্শন করেন এই নতুন দিনে। নতুন জামাকাপড় পরে একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে পালন পালন করেন এই বিশেষ দিন।
তালের মরসুমে বানান ঠান্ডা ঠান্ডা তালের শরবত। জানুন রেসিপি।
এছাড়াও ওড়িশার বিষুবসংক্রান্তি, মিথিলার জুড় শীতল, ভারতের বাইরেও কম্বোডিয়ার চউল চনাম থিমে, থাইল্যান্ডের সংক্রান, শ্রীলঙ্কার আলুথ অভুরুদ্দ এবং তিব্বতের নববর্ষ প্রায় একই সময় পালিত হয়। সবক্ষেত্রেই প্রায় ১০ হাজার বছরের পুরোনো কৃষি সংস্কৃতির সূত্রের মাধ্যমে এই সুবিশাল ভূখণ্ডের মানুষকে এক সুতায় বেঁধে রেখেছে এই বর্ষবরণ উৎসব।