বিনোদন

অ্যামাজন প্রাইমের নতুন সিনেমা “গুলাবো সিতাবো”, দেখার আগে পড়ে নিন এই লেখাটি

ভাল স্টারকাস্ট মানেই সিনেমা হিট এই তত্ব এখন মিথ। প্রমানস্বরূপ বলা যায়, বলিউডের “খান” বৃত্তের বাইরে অনামী স্টারকাস্ট নিয়ে ছবিও হিট হয় শুধুমাত্র গল্পের ওপর ভর করে।

Bengal Live বিনোদন,সৌম্যদ্বীপ গুহঃ বিগ বি অমিতাভ বচ্চন, বলিউডের শেকড় শক্ত করা আয়ুষ্মান খুরানা, নিজ গুণে সেরা বিজয় রাজ সঙ্গে অনন্য কমেডিয়ান বিজেন্দ্র কালা, ভিকি ডোনার, মাদ্রাস ক্যাফে, পিকু খ্যাত পরিচালক সুজিত সরকার– সবাই একসাথে গুলাবো সিতাবোয়, ভাবা যায়!

১২ই জুন, ২০১০ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইম-এর নতুন সিনেমা গুলাবো সিতাবো। থিয়েটার বন্ধ। অতঃপর সিদ্ধান্ত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। পরিচালক সুজিত সরকারের মুন্সিয়ানার কথা মাথায় রেখে অ্যামাজন প্রাইম গুলাবো সিতাবো-কে কিনে নিতে দ্বিধা করেনি নিশ্চই। সাথে যখন রয়েছে অমিতাভ বচ্চন ও আয়ুষ্মান খুরানা-র মতো অভিনেতা। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মূলত চলে গ্রাহক সাবস্ক্রিবশনে। তাই তাদের লক্ষ্য থাকে ভাল সিনেমা বা সিরিজ কিনলে তাদের সাবস্ক্রিবশন বাড়বে। এই ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিল গুলাবো সিতাবো।

আরও পড়ুনঃ অনুরাগ কাশ্যপের চোকড্ – পয়সা বোলতা হ্যায়, দেখার আগে চোখ রাখুন এই লেখায়

সুজিত সরকারের শেষের দিকের সিনেমাগুলির ব্যবসা ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী এবং নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, গুলাবো সিতাবো সিনেমা হল বা থিয়েটারে রিলিজ হলে তাঁর সমস্ত সিনেমার নিরিখে সবচেয়ে খারাপ ব্যবসা দিত এই ছবি। সময়ের সাথে সাথে দর্শকদের ভাবনা বদলেছে। ভাল স্টারকাস্ট মানেই সিনেমা হিট এই তত্ব এখন মিথ। প্রমানস্বরূপ বলিউডের “খান”-দের ছবির বাইরেও অনামী স্টারকাস্ট নিয়ে ছবিও হিট হয় শুধুমাত্র গল্পের ওপর ভর করে। তার এক্সিকিউশনের ওপর ভর করে।

গুলাবো সিতাবো লক্ষ্ণৌ-এর পুতুল নাচের চরিত্র হিসেবে জনপ্রিয়। তাদের দিয়েই শুরু হয় ছবি। সেই পুতুল নাচে অন্যের হাতের ইশারায়। রূপক হিসেবে এই সিনেমায় স্থান পেয়েছে মির্জা ও বাঁকে ওরফে অমিতাভ ও আয়ুষ্মান। এঁরা পরস্পর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে। যা চরিত্র হিসেবে প্রাইসলেস। গুলাবো সিতাবো-র মতো। এই দুই চরিত্র নিয়ে গল্প নিঃসন্দেহে আশা জাগায় বড় রকমের মনোরঞ্জনের। ইতিপূর্বে বলিউডে হয়ে যাওয়া ” ইয়ে তেরা ঘর ইয়ে মেরা ঘর” কমার্শিয়াল হিট ছবি।

আরও পড়ুনঃ সদ্য রিলিজ হল ওয়েব সিরিজ পাতাল লোক, ছবির আগে চোখ রাখুন এই লেখায়

একই ধরনের গল্প মনোরঞ্জন করেছে দর্শকদের। গুলাবো সিতাবো-কে সেই পথ না মাড়িয়ে হালকা আঁচে রান্না করতে চেয়েছেন পরিচালক। এই হালকা আঁচে-র ফর্মুলা বেশ জনপ্রিয় এখন বলিউডে। রান্নার আঁচ হালকা মানেই তা সুস্বাদু হবে তা নয়। তাতে প্রয়োজনীয় মশলা পাতি না দিলে রান্না না হয়ে তা শুধু সেদ্ধই হবে। গুলাবো সিতাবো তাই স্বাদহীন।

গুলাবো সিতাবো-র গল্প লক্ষ্ণৌর অলিগলি ও শতাব্দী প্রাচীন এক মহলে ঘোরাফেরা করে। পুরনো ভাড়াটে ও বাড়িওয়ালার নিত্য দিনের সমস্যাই এই গল্পের বিষয় বস্তু। সাথে যোগ হয় বাড়িওয়ালার লোভ। গল্প এগিয়ে চলে। চলতে চলতে ছন্নছাড়া হয়ে যায়। পরিচালক গুটিয়ে আনার চেষ্টা করে, আবার ছন্নছাড়া হয়ে যায়। এভাবেই একসময় শেষ হয়ে যায়। চরিত্ররা নিজেদের মতো করে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় হাসি যোগাতে। ড্রামা ও কমেডি ঘরানার ছবি হয়ে কখনই পরস্পরের মেলবন্ধন তৈরি হয় না। তার চেয়েও অবাক করে গল্পের ক্লাইম্যাক্স।

আরও পড়ুনঃ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ? জেনে নিন লকডাউনে আপনার শিশুর মন খারাপের দাওয়াই, ভাল থাকার উপায়

ক্লাইম্যাক্স নিয়ে পরিচালক নিজেও দ্বিধায় ছিলেন তা স্পষ্ট। গল্পটি যেখানে শেষ হওয়ার কথা সেখানে শেষ না করে অযথা টেনে নিয়ে গিয়েছে একটি ভাল নোট-এ শেষ করার ব্যর্থ চেষ্টায়। গোলাবো সিতাবো শেষ হতে পারত, ফাতিমা মহলের মালকিন ফাতিমা বেগম-এর চিঠিতে। যেখানে মির্জা তার পছন্দের চেয়ারটি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। পড়ে রয়েছে ফাঁকা জীর্ণ মহল, ফাতিমা মহল। গুলাবো সিতাবো-র লোভের অবসান অন্যের হাতের ইশারায়। তারা বাস্তবেই অন্যের হাতের পুতুল। পুতুল নাচের পুতুলের মতো। এটাই ছিল সবচেয়ে ভাল মোমেন্টাম শেষ করার। কিন্তু তা না করে আরো দশ মিনিট টেনে দর্শককে আরো বোর করেছেন পরিচালক সুজিত সরকার।

মির্জার চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন অনবদ্য। তাঁর বিশেষ মেক আপ মোটের ওপর ভাল। কিন্তু নাক ও দাঁড়ির আড়ালে রয়ে গেছে তাঁর লোভী চেহারা। হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ভাঙা ভাঙা সংলাপের অনেক অংশ। আয়ুষ্মান খুরানা-র জিভ দাঁতে ঠেসে উচ্চারণ ঠিকঠাক থাকলেও তাঁর পেটের বাড়তি মেদ মাঝে মাঝেই বলে উঠছিল “আমি ডুপ্লিকেট “! বিজয় রাজ-এর মতো বলিষ্ঠ অভিনেতাকে ব্যবহার করাই হয়নি পুরোপুরি। বিজেন্দ্র কালা স্বল্প পরিসরে নিজ মেজাজে অমলিন।

আরও পড়ুনঃ করোনা – বায়োলজি, বিশ্বপুঁজির খেলা এবং আমাদের অস্তিত্ব

পরিশেষে বলা যায়, পরিচালকের হোম ওয়ার্ক ঠিকঠাক ছিল না এই প্রোজেক্টে। হাসির উপাদান থাকলেও হাসাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। ক্যামেরা ওয়ার্ক অত্যন্ত সাধারণ মানের। ফলে দর্শককে গল্পে টেনে রাখতে অক্ষম। বলিউডকে অসাধারণ সিনেমা উপহার দিয়েও বর্তমানে বহু পরিচালক অচিরেই ফুরিয়ে গিয়েছেন। যেমন, ইমতিয়াজ আলি! আপনি একজন ভাল পরিচালক। অন্যদের মতো এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবেন না, প্লিজ! আত্মবিশ্বাসকে পাশে রেখে নতুন সময়কে নিয়ে ভাবুন। নতুন করে ভাবুন। আমরা অপেক্ষায় রইলাম…

Related News

Back to top button